নিলামের তালিকাভুক্তি করার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কন্টেনার বন্দ রয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা বাজারমূল্যের রূপচাঁদা মাছ ও আদার চালান। পচনশীল পণ্য আমদানিকারক খালাস না নিলে দ্রুত নিলাম করার কথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) স্থায়ী আদেশে রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের অনীহার কারণে সেই আদেশ এখনো বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
যথাসময়ে নিলামে না তোলার কারণে কন্টেনারে নষ্ট হচ্ছে পণ্য। অনেকক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার কারণে নিলামে তোলার পরে কাঙ্ক্ষিত দর উঠছে না। এরমধ্যে সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর প্রায় ২৮ টন হিমায়িত মাংস নিলামে তোলা হয়। কেজি হিসেবে দর উঠে মাত্র ১৪ টাকা ২৯ পয়সা! এর আগে যথাসময়ে নিলাম না হওয়ার কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে নিজেদের টাকা খরচ করে কন্টেনারে নষ্ট হওয়া পণ্য ধ্বংস করে খালি করতে হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিএসআর এগ্রো ইন্টারন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৭ হাজার ৯০০ কেজি (প্রায় ২৮ টন) আদা নিয়ে আসে। চালানটি খালাসের জন্য আমদানিকারকের মনোনীত সিএন্ডএফ এজেন্ট রিতাইমনি এসোসিয়েট বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চালানটি খালাস না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১৪ আগস্ট আরএল তালিকাভূক্ত করে। এছাড়া ঢাকার ফারাশগঞ্জ রোডের সূত্রাপুর এলাকার আমদানিকারক মেসার্স কাবা এন্টারপ্রাইজ ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৮ হাজার ৮০০ কেজি (প্রায় ২৯ টন) আমদানি করে। কিন্তু আমদানিকারক চালানটি খালাসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল না করায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২১ আগস্ট আরএল তালিকাভূক্ত করে।
অন্যদিকে নগরীর ফিশারিঘাটে ইকবাল রোডের মেসার্স রফিক এন্ড ব্রাদার্স মিয়ানমার থেকে ৫৬ হাজার ৮০০ কেজি (প্রায় ৫৭ টন) হিমায়িত রূপচাঁদা মাছ নিয়ে আসে। চালানটি খালাসে নগরীর শেখ মুজিব রোডের মাহমুদা এন্টারপ্রাইজ গত ৩ আগস্ট বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চালানটি খালাস না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১০ আগস্ট আরএল তালিকাভূক্ত করে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে থেকে আরএল পাওয়ার দুই মাস পেরিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার এসব অখালাসকৃত চালানের ইনভেন্ট্রিই করতে পারেনি।
জানা যায়, বর্তমানে খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি ইন্দোনেশিয়ার আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। অপরদিকে ফিশারীঘাটের পাইকারী মাছের আড়তে প্রতি কেজি মিয়ানমারের রূপচাঁদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে সরকার কোটি কোটি রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ বন্দর থেকে আরএল পাওয়ার পর কাস্টমসের নিলাম শাখার কাজ হবে, দ্রুত ইনভেন্ট্রি শেষ করে ভ্যালুয়েশনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো। শাখা থেকে পণ্যের ভ্যালুয়েশন নেয়ার পর পণ্যের সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণের জন্য মূল্য নির্ধারণ কমিটি নিলামের সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করবে। এই কাজটি সম্পন্ন করতে বড়জোর দুই সপ্তাহ লাগার কথা। নিয়ম হচ্ছে অনুযায়ী, বন্দর ইয়ার্ডে পণ্য নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে সর্বমোট ৪৫ দিন পর তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস। এখন যেহেতু পচনশীল পণ্য দ্রুত নিলামে তোলার বিধান রয়েছে, তাই বাকি ১৫ দিনের মধ্যে নিলাম হয়ে গেলে একদিকে সরকার রাজস্ব আহরণ করলো, আবার বাজারে গুণগত মান সম্পন্ন পণ্য সরবরাহও নিশ্চিত হলো।
জানতে চাইলে পচনশীল পণ্যের নিলামে দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার আবদুল হান্নান দৈনিক আজাদীকে বলেন, নিলামে তালিকাভূক্ত পণ্যের চালান আমরা নিয়মিত ইনভেন্ট্রি করছি। আগের কিছু পুরনো রয়ে যাওয়ায় আমরা সেগুলো ইনভেন্ট্রি করছি।
উল্লেখ্য, এনবিআর থেকে জারি করা অখালাসকৃত বা চোরাচালানের অভিযোগে আটক ও বাজেয়াপ্তকৃত পণ্যের নিষ্পত্তি পদ্ধতি সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশ–২০২২ এ বলা হয়েছে, নিস্পত্তিযোগ্য পচনশীল পণ্য হলে তা দ্রুত নিলামের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্য নিলামের আয়োজন করতে হবে। কাস্টম হাউসের ক্ষেত্রে পণ্য গ্রহণের পর পরই কাস্টমস হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাসিসটেন্ট/ডেপুটি কমিশনারের অনুমতিক্রমে সংশ্লিষ্ট নিলামকারী কর্তৃক প্রকাশ্য নিলামের সময় নির্ধারণ করে কমপক্ষে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত চতুর্দিকে এবং নিকটবর্তী স্থানে উক্ত পণ্যের বাজার থাকলে সেখানে মাইকিং করে এবং কাস্টম হাউসের নোটিশ বোর্ড এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।