রমজানকে কেন্দ্র করে বেড়েছে পণ্য আমদানি, তবে সেভাবে বাড়েনি পণ্য খালাস। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনারের পাহাড় গড়ে উঠতে শুরু করেছে। অবস্থা সামাল দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেনারের ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু গতকাল থেকে কন্টেনার ভাড়া দ্বিগুন করার কথা বলা হলেও আমদানিকারকদের অনুরোধে তা স্থগিত করা হয়েছে। তবে পণ্য খালাসে গতিশীলতা না আসলে স্টোর রেন্ট দ্বিগুন করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রমজান উপলক্ষে কোটি কোটি টাকার পণ্যভর্তি কন্টেনার আসছে দেশে। প্রতিদিন হাজার হাজার কন্টেনার নামছে বিভিন্ন জাহাজ থেকে। পণ্যভর্তি কন্টেনারের পাহাড় জমছে বন্দরে। বন্দরের ইয়ার্ডে সর্বসাকুল্যে ৪৯ হাজার টিইইউএস কন্টেনার রাখার মতো জায়গা রয়েছে। অথচ গতকাল বন্দরের ইয়ার্ডে রাখা কন্টেনারের পরিমান ৪০ হাজার টিইইউএস ছেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিন কয়েকের মধ্যে ইয়ার্ডে কন্টেনার রাখার জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
এ অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এফসিএল (ফুল কনটেইনার লোড বা পুরো কন্টেনারে একজন আমদানিকারকের পণ্য) কন্টেনার সরিয়ে নিতে নোটিশ দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছিল যে, কন্টেনার সরিয়ে নেয়া না হলে ১ মার্চ থেকে স্টোররেন্ট দ্বিগুন করা হবে। জাহাজ থেকে কন্টেনার নামানোর তারিখের ১১তম দিন থেকে দ্বিগুণ স্টোররেন্ট কার্যকর করার নোটিশ দেয়া হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের নোটিশ দেয়ার পর থেকে আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে স্টোররেন্ট না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। করোনাকালে ব্যবসা বাণিজ্যের নাজুক অবস্থায় স্টোররেন্ট বাড়ালে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলেও তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এতে করে গতকাল থেকে স্টোররেন্ট দ্বিগুন করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা থেকে সরে আসে। কিন্তু আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বন্দরের অভ্যন্তর থেকে এফসিএল কন্টেনার খালাসে গতিশীলতা আনা না হলে স্টোররেন্ট দ্বিগুন করা হবে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সতর্ক করেন।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্টোররেন্ট বাড়ানোর নোটিশ স্থগিত করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করছি। বন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানিকারকদের কথা বিবেচনা করে স্টোররেন্ট দ্বিগুন করার বিষয়টি স্থগিত করেছে। তিনি আমদানিকারকদের দ্রুত কন্টেনার খালাস করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এতে সবারই সুবিধা।
এনামুল করিম বলেন, ‘রমজানকে কেন্দ্র করে আমদানি বাড়ছে। বিপুল পরিমানে পণ্য আসছে। এখন কন্টেনার খালাস যদি সেভাবে না হয় তাহলে আমাদেরকে কঠোর হতে হবে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক আমদানিকারক গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেছেন, রমজানের বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি। তাই রমজান উপলক্ষে যেসব পণ্য আনা হয়েছে সেগুলো খালাস করা হচ্ছে না। এসব পণ্য বাইরে গুদামে রাখতে গেলে খরচ অনেক। পণ্যের মানও ঠিকঠাক রাখা সম্ভব হবে না। আবার পণ্য মজুদ করার ব্যাপারে প্রশাসনের হুমকি ধমকির ব্যাপারটিও রয়েছে। বন্দর থেকে কন্টেনার খালাস না করলে পণ্যগুলো নিরাপদে থাকছে এবং প্রশাসনের ব্যাপারটি থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। তাই রমজানের জন্য যেসব পণ্য আমদানি হচ্ছে সেগুলো বন্দরের ইয়ার্ডে পড়ে রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের মানুষ বাড়ছে। আমদানি বাড়ছে। কন্টেনারের পরিমান বাড়ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের সক্ষমতা না বাড়িয়ে এখন স্টোররেন্ট বাড়ানোর হুমকি দিচ্ছে। বন্দর স্টোররেন্ট বাড়ালে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াবে। এতে দেশের সাধারণ মানুষই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও তিনি জানান।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অপর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিষয়টিকে খুবই সিরিয়াসলি নেয়া দরকার বলে মন্তব্য করে বলেছেন, ইয়ার্ডে ইয়ার্ডে কন্টেনারগুলোকে গুদাম বানিয়ে রাখার প্রবনতা বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে উঠবে। তখন স্টোররেন্ট দ্বিগুন করেও কন্টেনার রাখার জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না।