কথা দিয়েও রাখেনি ম্যাক্স

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকালীন ভোগান্তি হ্রাসের যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে মানুষের দুর্ভোগ কেবলই বাড়ছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুলিশকে কথা দিয়েও কথা রাখা হয়নি। রাস্তায় চার লেনের গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। যতটুকু রাস্তা রয়েছে তাও খানাখন্দকে ভরা। ম্যাক্স রাস্তাটি ঠিক করে দেয়ার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে কেবলই সময়ক্ষেপণ করছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং এবং সল্টগোলা থেকে কাঠগড় পর্যন্ত রাস্তা যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, বন্দরনগরীর যান চলাচলের বন্ধাত্ব ঘুচানো, প্রত্যাশিত গতিশীলতা সৃষ্টিসহ বিভিন্নমুখী লক্ষ্য সামনে রেখে গ্রহণ করা হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যাপক গতিশীলতা আসবে। মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময়ে যাতায়ত করা যাবে এয়ারপোর্ট কিংবা পতেঙ্গার শিল্পাঞ্চলে। শহরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বহুল প্রত্যাশার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। পাঁচটি পৃথক ভাগে বিভক্ত করে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল সেতু নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। এরমধ্যে লালখান বাজার-বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত প্রথম ধাপ, বারেক বিল্ডিং-সল্টগোলা ক্রসিং দ্বিতীয় ধাপ, সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং তৃতীয় ধাপ, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড় চতুর্থ ধাপ এবং কাঠগড় থেকে পতেঙ্গার ল্যান্ডিং পয়েন্ট পর্যন্ত পঞ্চম ধাপ চিহ্নিত করা হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল শেষ ধাপ থেকে। বর্তমানে ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত দুইটি ধাপের (৪র্থ ও ৫ম) কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই দুই ধাপে গার্ডার স্থাপনের কাজ চলছে। আবার বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত এলাকায় বর্তমানে কোথাও পিলার নির্মাণ করা হচ্ছে। কোথাও বা করা হচ্ছে পাইলিং। শহরের ব্যস্ততম এই অংশটিতে কাজ করার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সড়কের মাঝখানে যে পরিমাণ এলাকা ঘেরা হবে তার দুইপাশে বিশ ফুট করে দুই লেনে গাড়ি চলাচলের রাস্তা নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশের এই শর্ত মেনেই নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স রেনকিং জেবি লিমিটেড ঘেরা দেয়া অংশের দুই পাশে চার লেনের গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করার কথা। এলাকায় কাজ শুরু করার পর রাস্তাটি সম্প্রসারিত করা হয়। ঘেরা দেয়া অংশের দুই পাশে দুই লেন করে চার লেনে গাড়ি চলাচলের জায়গা করা হয়। কিন্তু বেশ কিছু বৈদ্যুতিক পিলারের কাছে বিভিন্ন অংশে রাস্তার যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিয়েছে রাস্তার কার্পেটিং নিয়ে। পুরো রাস্তার পিচ নষ্ট হয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। হাজার হাজার খানাখন্দক এবং গর্তে ভরে উঠেছে পুরো রাস্তা। বৃষ্টির পানি জমে অবস্থা আরো নাজুক হয়ে উঠে। রাস্তাটি ঠিকঠাক রাখার দায়িত্ব ম্যাক্স রেনকিং-এর হলেও তারা এই ব্যাপারে চরমভাবে উদাসিনতা দেখাচ্ছে। মাসের পর মাস শহরের প্রধান এই রাস্তাটি নষ্ট হয়ে থাকলেও কারো যেন কিছু যায় আসে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর পুলিশের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাস্তাটির অবস্থা ভয়াবহ। পুলিশ নিজেরাও বিভিন্ন সময় ইট এনে গর্ত ভরাট করেছে। রাস্তা জুড়ে খানাখন্দক থাকার কারণে দিনভর যানজট লেগে থাকে। আবার শহরের প্রধান এই সড়কটির যান চলাচল মুখ থুবড়ে পড়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শহরের সার্বিক যান চলাচলে। এই রাস্তার ধকল সামলাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাস্তার অবস্থা খারাপ এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাস্তার দুই পাশ কার্পেটিং করে দেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে কাজ করারই সুযোগ পাচ্ছি না। বৃষ্টির কারণে ঢালাই দেয়ার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে রাস্তার কার্পেটিং কাজে হাত দেয়া হবে।
এই ব্যাপারে ম্যাক্স রেনকিং জেভি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মুনির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়েও তার কোন সাড়া মিলেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবারো বাঁধ দেয়া হবে খালে
পরবর্তী নিবন্ধসংখ্যালঘুদের সুরক্ষা চায় জাতিসংঘ