পরিবারের সদস্যদের ঈদের কেনাকাটার জন্য টাকা পাঠিয়ে জানিয়েছিলেন, ২৫ মার্চ থেকে ছুটি মিলেছে, সেদিনই ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসবেন। তার দুদিন আগেই সোমবার বাড়িতে চলে এলেন বিজিবির সিপাহী মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। কিন্তু সেই দেহে প্রাণ নেই। বেলাল তার ১৮ মাসের শিশুকে কোলে নিতে পারলেন না; আট বছরের মেয়ের মাথায় হাত রেখে আদরও করতে পারলেন না।
বেলালের আগমনে যে বাড়িটিতে আনন্দের বন্যা বয়ে যাওয়ার কথা; কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের সেই বাড়িজুড়ে এখন শুধুই শোকের মাতম, আহাজারি। বেলাল (২৮) ওই গ্রামেরই বজলুর রহমানের ছেলে। বাড়িতে বাবা–মা ছাড়াও স্ত্রী ও দুই কন্যা রয়েছে তার। খবর বিডিনিউজের।
তিনি কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত ফাঁড়িতে সিপাহী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত শুক্রবার গভীর রাতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি নৌকা অনুপ্রবেশের সময় বাধা দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান তিনি। গত রোববার দুপুরে শাহপরীর দ্বীপ গোলারচর এলাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গতকাল সোমবার কাজিয়াতল গ্রামে বেলালের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মা–বাবা ও স্ত্রী রোকসানা চিৎকার করে কান্না করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সন্তানহারা মা যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। বিলাপ করতে করতে বেলালের বাবা বজলুর রহমান বলেন, ঈদে বাড়ি আসবে আমার ছেলে। ফোনে আমাকে জানাল। আমি কত খুশি হয়েছিলাম। টাকা পাঠাইছে। বলছে, ২৫ তারিখ থেকে আমার ছুটি মঞ্জুর হইছে। আপনি পছন্দমত পোশাক কিনে ফেলবেন। আমি আসছি। আল্লাহ আমার ছেলেকে নিয়ে গেল। আমার ছেলে কিভাবে মরল? আমি জানতে চাই। কথা দিয়েও আমার ছেলের বাড়ি ফেরা হল না। গত শুক্রবার রাতে নিখোঁজ হলেও পরিবার বিষয়টি জানতে পারে শনিবার বিকালে। বেলালের ভাই নাজমুল হাসান বলেন, শনিবার বিকালে বিজিবি থেকে আমাদের বাড়িতে দুজন লোক আসে। এসে বলে যে, আমার ভাই বেলাল শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা উদ্ধারকালে নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে এখনো পাওয়া যায়নি। রোববার দুপুরে আমরা কুমিল্লা বিজিবি ক্যাম্পে যাওয়ার পরপর সেখানে খবর আসে যে, রাখাইন এলাকায় আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। নিহতের স্ত্রী রোকসানা খানম বলছিলেন, কথা ছিল ২৫ তারিখে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবে। বাড়িতে ঈদ করবে। এখন আমাকে সাগরে ভাসিয়ে সে চিরকালের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেছে। দুটি অবুঝ শিশু সন্তান নিয়ে আমি এখন কোথায় দাঁড়াব। মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান বলেন, টেকনাফে বিজিবির সিপাহী মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি। আমরা তার বাড়ির সব খোঁজ–খবর রাখছি। সরকারিভাবে যে নির্দেশনা আসবে আমরা তা বাস্তবায়ন করব।