আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় কর্মীদের কোথাও সংঘর্ষে না জড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, কথায় কথায় আপনারা মাথা গরম করবেন না। ঠান্ডা মাথায় এই অপশক্তিকে বাংলাদেশের জনগণ রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করবে।
গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। কাদের বলেন, আমরা কারও সঙ্গে সংঘাত–পাল্টা সংঘাতে যাব না। আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব এই অপশক্তিকে। এই অপশক্তিকে বাংলার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে। আমরা ভুল থেকে শিক্ষা নেব–এই আশ্বাস জনগণকে দিতে হবে। কাতারের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে নেত্রী বলে গেছেন, কোনো সংঘাতে যাওয়া যাবে না। আমরা সংঘাতে যাব না, কিন্তু সংঘাত কেউ করতে এলে আমরা কি চুপ করে বসে থাকব? আমাদের উপর যদি কেউ হামলা চালায়, তাহলে তার সমুচিত জবাব কীভাবে দিতে হয় তা আওয়ামী লীগ জানে। খবর বিডিনিউজের।
রাজশাহীতে এক বিএনপি নেতা শেখ হাসিনাকে হুমকি দেওয়ার পরও বিএনপি নেতারা চুপ কেন–এমন প্রশ্ন রেখে কাদের বলেন, দেশে ঝড় বয়ে গেছে, সারা দেশ গর্জন করে উঠেছে। শেখ হাসিনাকে কটূক্তি, হত্যার হুমকি দেওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ অবাক হলো। প্রকাশ্য দিবালোকে রাজশাহীর পুঠিয়ায় জেলা আহ্বায়ক যে বক্তব্য, হত্যার হুমকি দেওয়ার পর দুদিন চলে গেল। মির্জা ফখরুল একটা কথাও বললেন না, বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতা একটা কথাও বললেন না। সবাই নীরব হয়ে আছেন। তাই আজকে প্রশ্ন জাগে, এটা তার (রাজশাহী বিএনপির আহ্বায়ক চাঁদ) এক দফা নয়, এটা বিএনপির এক দফা। শেখ হাসিনাকে হত্যার মিশন নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে। তাদের এক দফা শেখ হাসিনাকে হত্যা করা।
গত শুক্রবার রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর হাই স্কুল মাঠে জনসমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেন বলে আওয়ামী লীগ থেকে অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দেয় ক্ষমতাসীন দলটি। দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে বেশ কয়েকটি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাই আজকে তার একমাত্র শত্রু। সেজন্যই বিএনপি ১৪ বছর পরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, কিন্তু জনগণের সাড়া না পেয়ে তারা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে যে জননেত্রী তাকে স্তব্ধ করে দিতে হবে। এই ষড়যন্ত্র নিয়ে তারা আজকে মাঠে নেমেছে। বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব, আমাদের পার্টির কোনো জেলার নেতা যদি খালেদা জিয়াকে হত্যা করার হুমকি দিত, তাহলে আপনারা কী করতেন, কী জবাব দিতেন, আমি জানতে চাই। শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আপনারা বাংলাদেশকে আপনাদের সেই ষড়যন্ত্রের, জঙ্গিবাদ–সাম্প্রদায়িকতার লীলাভূমিতে পরিণত করবেন; অস্ত্রপাচার–লুটপাট, গণতন্ত্রের হত্যার জন্য এই শ্যামল বাংলাদেশকে আফগানিস্তান–পাকিস্তান বানানোর যে দুঃস্বপ্ন আপনারা দেখছেন, তার পথের বাধা শেখ হাসিনা, তাকে হত্যা করে আপনারা স্বপ্নের বাংলাদেশ (আফগানিস্তান) বাস্তবায়ন করতে চান।
দলের নেতাকর্মীরা চুপ করে বসে থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের মানুষ বুঝেছে পঁচাত্তর আর ২০২৩ এক নয়। বিএনপির উপলব্ধি করা উচিত, রাজশাহীর এক নেতা হুমকি দেওয়ায় সারা দেশ গর্জন করে উঠেছে। শেখ হাসিনার উপর হামলা করলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা চুপ করে বসে থাকবে না। সামনে নির্বাচন, তারা নির্বাচন চায় না। তারা চায় সংঘাত, অস্থিরতা, অশান্তি, রক্তপাত। আমরা চাই নির্বাচন, বাংলাদেশের জনকণ্ঠকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে। আমরা নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। আমি সরকারি দলের সেক্রেটারি বলছি, দুই দিন পর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। এই নির্বাচনে সরকারি দল নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। আগামীতে জাতীয় নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হবে। আমরা বিদেশিদের অনুরোধ করব, আপনারা আসুন এবং দেখুন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কীভাবে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে।