কতটুকু মন ভরাচ্ছে পারকি সৈকত

আনোয়ারা প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

ঈদ শেষ হলেও আনন্দের রেশ এখনো কাটেনি। ঈদের ছুটি ফুরালেও শহরের কাছের বিনোদন স্পট পারকি সমুদ্র সৈকতে দিনকে দিন যেন ভিড় বাড়ছেই। ঈদের পর থেকে তিনদিন ধরে এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভ্রমণার্থীর সমাগম ঘটেছে। ভিড় এতটাই বেড়েছে যে সন্ধ্যায় ফিরতি যাত্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বেড়াতে আসা লোকজন নেচে গেয়ে, নোনাজলে গোসলসহ নানাভাবে আনন্দ উপভোগ করলেও প্রায় সবার একই কথাএই সৈকতে নতুনত্ব কিছু নেই। শহরের কাছে হওয়াতে মুক্ত বিনোদনের আশায় এখানে আসলেও প্রকৃত অর্থে সাগর দেখা ছাড়া এখানে আর তেমন কিছুই নেই।

গতকাল বিকেলে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, হাজারো মানুষের মিলনমেলা। দুপুরের পর থেকে টেক্সি, মাইক্রো, কারে চড়ে লোকজন জড়ো হতে থাকেন সৈকতে। দর্শণার্থীদের কেউ কেউ মেতেছিলেন সমুদ্রস্নানে। কেউ স্পিডবোটে চড়ে, আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে উঠে আনন্দ উপভোগ করছেন। পরিবার আর বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসে অনেকে সাউন্ড সিস্টেমে উচ্চ শব্দের গানে ঠোঁট মেলাচ্ছিলেন।

নগরীর জেমসেন হল এলাকার আবুল হাসান মঈনুদ্দীন বলেন, ঈদের পর প্রতিবছর পারকি বা পতেঙ্গা সৈকতে যাওয়া হয়। কখনো কঙবাজারেও গেছি। সাগরের কাছে না গেলে ঈদকে ঈদ মনে হয় না। মীরসরাই থেকে বেড়াতে আসা ওমর ফারুক বলেন, কর্মসূত্রে আনোয়ারায় থাকলেও পারকিতে এটি তার প্রথম ভ্রমণ। চলমান তাপদাহে ঝাউবাগানে সুশীতল পরশ তাকে তৃপ্ত করেছে। তিনি বলেন, ঈদের বন্ধে আত্মীয়স্বজন নিয়ে এখানে বেড়াতে এলাম। সাথে দূর থেকে টানেলটাও দেখার সুযোগ হলো। এটি যেন বাড়তি পাওয়া। কাফকো সেন্টারের পরের পারকি সৈকতে এপ্রোচ সড়ক যেখানে যুক্ত সেখান থেকে খুব কাছে আনোয়ারা পয়েন্টে টানেলের প্রবেশমুখ। সরাসরি টানেল দেখা না গেলেও কাছেই সুদৃশ্য সড়ক দেখে মন ভরাচ্ছে অনেকের। সেখান থেকে উড়াল সড়কের মাধ্যমে টানেল সড়ক যুক্ত হয়েছে ৬ লেইনের সংযোগ সড়কে। পারকিতে ঈদে ভ্রমণপিয়াসীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস যেমন ছিল, ক্ষোভও ঝেড়েছেন অনেকে। নগরীর মনসুরাবাদ থেকে বেড়াতে আসা ওবায়দুল কাদের বলেন, পারকির যা সৌন্দর্য সবটাই সৃষ্টিকর্তার দেয়া। সারি সারি ঝাউবন, সমুদ্রের নীলাভ জলরাশি আর দূর সাগরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের আসা যাওয়া এসবই তো বছরের পর বছর দেখছি। কিন্তু সম্ভাবনাময় এই সৈকতকে আকর্ষণীয় করতে আজ পর্যন্ত সেইরকম কোনো সরকারিবেসরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে দিন দিন আগ্রহ কমছে। যারা আসছেন আর কোনো বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়েই আসছেন।

হালিশহর থেকে বেড়াতে আসা আবদুল ওয়াহেদ বলেন, তিনবছর পর দ্বিতীয়বার এখানে বেড়াতে এসেছেন। পার্থক্য হলো আগে কোনো খাবারের হোটেল ছিল না। এখন কয়েকটি হোটেল হয়েছে। তবে খাবারের গলাকাটা দামে হতাশ তিনি। আন্দরকিল্লা রাজাপুকুর লেইন থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসেন অলক দত্ত। তিনি বলেন, পরিচিতদের মুখে পারকির অনেক সৌন্দর্যের কথা শুনেছি। বেড়াতে এসে মিল খুঁজে পাইনি। সৈকতের এক কিলোমিটার এলাকায় ডাবের খোসা, প্লাস্টিক, চিপসের প্যাকেটে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। ভ্রমণার্থীরা জানান, সৈকতে বেপরোয়া ফটোগ্রাফার চক্র ভ্রমণার্থীদের নানাভাবে হয়রানি করছে। পতেঙ্গা বা কঙবাজার সৈকতে ফটোগ্রাফারদের জন্য পোশাক, আইডি কার্ড, মূল্য নির্দিষ্ট করে দেয়াসহ নানা নির্দেশনা থাকলেও এখানে বিচকেন্দ্রিক ফটোগ্রাফারদের দাপটের কাছে সবাই অসহায়। পছন্দের ছবি বাছাইয়ের সুযোগ নেই। ছবি প্রতি অনেক সময় ১০ টাকা দাবি করা হয়। তাদের ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েও সুবিচার পাওয়া যায় না। সমুদ্র সৈকতে কথা হয় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কর্মী আবু তালেবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের পর থেকে যেভাবে ভিড় দেখছি তাতে মনে হচ্ছে এই কয়দিনে এক লাখের বেশি পর্যটক এসেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যয় কমাতে ব্যাংকে ‘হাইব্রিড সভা’
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোট শুরু