নগরীর পাহাড়তলীতে পারভীন আক্তার (৫০) নামে এক নারী প্রতারককে আটক করেছে র্যাব। র্যাব জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এই নারী প্রতারক কখনো ম্যাজিস্ট্রেট আবার কখনো ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জরিমানার নামে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবার আইনজীবীর পরিচয়ে বিভিন্ন মামলা–মোকাদ্দমা পরিচালনার কথা বলে আইনি সেবা নিতে আসা লোকজনদের টাকা আত্মসাত করেছেন। তার বড় প্রতারণা হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে সঞ্চয়ের নামে অন্তত ৩ হাজার মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
গত শনিবার নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন ডিটি রোড এলাকায় ঢাকা ভবন নামে একটি ভবনের ১০ম তলায় ‘স্বীকৃতি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থেকে এই নারী প্রতারককে আটক করা হয়েছে বলে শনিবার র্যাবের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এর আগে পারভীন আক্তারের প্রতারণার শিকার নিম্ন আয়ের কয়েকজন ভুক্তভোগী র্যাব কার্যালয়ে গিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তার বিরুদ্ধে ১০টির বেশি প্রতারণার মামলা রয়েছে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তারা। র্যাবের সহকারী পরিচালক মাহামুদুল হাসান বলেন, স্বীকৃতি নামে কথিত প্রতিষ্ঠানটিতে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে সঞ্চয় জমা করে বিভিন্ন শ্রেণির সাধারণ পেশাজীবী মানুষ। কথিত প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের দায়িত্বে থাকা আসামি পারভীন আক্তারের বিরুদ্ধে সেসব সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
র্যাব–৭ চান্দগাঁও কার্যালয়ের প্রধান কাজী মো. তারেক আজিজ গতকাল আজাদীকে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানটির ঋণ ও সঞ্চয়ের নামে পারভীন আক্তার সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন। আমাদের জানামতে, এ সংস্থাটির অধীনে ৩ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে। কেউ ৩০ হাজার টাকা, কেউ ৫০ হাজার, আবার কেউ ৭০ হাজার টাকা করে সঞ্চয় রেখেছিল। সেসব টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পারভীনের বিরুদ্ধে। তবে আত্মসাতকৃত মোট টাকার পরিমাণ এখনো জানা যায়নি।
র্যাব কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের অভিযানে তার ব্যাংক হিসাবের কয়েকটি চেক বই জব্দ করেছি। পরবর্তীতে তদন্তের মাধ্যমে মোট টাকার পরিমাণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল বলে পারভীন আমাদের জানিয়েছেন। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি ২০১৪ সালের আগে থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠানটির নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন। ২০১৪ সালে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাত ও প্রতারণার অভিযোগে সমবায় অধিদপ্তর এই প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন বাতিল করেছিল।
র্যাব জানায়, কথিত প্রতিষ্ঠানটিতে সঞ্চয় আদায়ের জন্য কর্মচারী রয়েছে। এসব কর্মচারীর নিয়োগে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে নেয়া হয়েছিল। পারভীন আক্তারের নিয়োগকৃত কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলে তাদের নামে মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে কর্মস্থলে থাকতে বাধ্য করেন। পাহাড়তলী ডিটি রোডে স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে বসে ভুয়া আইনি সেবা দিয়ে সাধারণের সাথে প্রতারণা করছেন এই নারী।
কাজী মো. তারেক আজিজ বলেছেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নামে একটি প্যাড বই তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে। সেখানে আইনি সহায়তার নাম দিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা আত্মসাত করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে মামলা–মোকাদ্দমা পরিচালনার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নিজেকে একজন আইনজীবী পরিচয় দিয়েও এসব প্রতারণা করে আসছিলেন। তার কাছ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কয়েকটি রশিদ বই পাওয়া গেছে। এসব রশিদ বইয়ে ভোক্তা অধিকার আইনে বিভিন্নজনকে জরিমানা করার প্রমাণ পাওয়া যায়।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, কখনো ম্যাজিস্ট্রেট, আবার কখনো ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা সেজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জরিমানার নামে তিনি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে অনুদান পেতে প্রকল্প প্রস্তাবনার কয়েকটি আবেদন পাওয়া গেছে পারভীনের কাছ থেকে। সম্প্রতি একটি মন্ত্রণালয়ে ৬ কোটি ৩৫ লক্ষ ২৯ হাজার ৪০০ টাকার একটি প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলেন এই প্রতারক। পারভীনের কাছে পাওয়া দুইটি আইডি কার্ডে ভিন্ন পরিচয় ও নাম ঠিকানা ব্যবহার করার প্রমাণ পেয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
র্যাব জানিয়েছে, কখনো মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, এনজিও কর্মকর্তা, পরিবেশসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে পারভীন আরও নানাজনের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন।
ওই নারী প্রতারকের পাহাড়তলী ডিটি রোডে কথিত অফিস ও বাসায় র্যাবের অভিযানে ভুয়া আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, এনআইডি, সঞ্চয় ও ঋণ পাসবই, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও বই, স্ট্যাম্প, ভোক্তা অভিযানে জরিমানা আদায়ের রশিদ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সিল, স্বীকৃতি নামক সংস্থার ডেবিট ও ক্রেডিট ভাউচার বই, ফিঙড ডিপোজিট রশিদ বই, অনুদান আদায়ের রশিদ বইসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।