কক্সবাজার সৈকতে ভেসে এলো বিরল জাতের মরা পরপইস

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | শনিবার , ১০ মে, ২০২৫ at ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতে ভেসে এলো একটি বিরল প্রজাতির মরা পরপইস। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার সময় সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে মরা পরপইসটি সৈকতে ভেসে আসে বলে জানান স্থানীয়রা। এর আগে গতবছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি একই পয়েন্ট সৈকতে একটি মৃত পরপইস ভেসে আসে। এরপর একই বছরের ৩ মার্চ টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের চৌকিদারপাড়া সৈকতে একটি এবং ১৩ অক্টোবর একই ইউনিয়নের হলবনিয়া সৈকতে দুটি পরপইসের মৃতদেহ ভেসে আসে। এর আগে নিকট অতীতে কক্সবাজার উপকূলে পরপইসের দেখা মিলেনি বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোহাম্মদ শরীফ।

তিনি বলেন, মরা পরপইস ভেসে আসার খবর পেয়ে ডিজির নির্দেশে ঘটনাস্থলে বোরির একটি বিজ্ঞানী দলকে পাঠানো হয়েছে। তারা পরীক্ষানিরিক্ষা করে স্থানীয় বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। বনকর্মীরা মৃত প্রাণীটি মাটি চাপা দেয়। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি জানান, কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতে একটি মৃত সামুদ্রিক প্রাণী ভেসে আসার খবর পেয়ে ঘটনাটি বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরি) কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। পাশাপাশি বনকর্মীদেরও অবহিত করা হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বোরির বিজ্ঞানী ও বনকর্মীরা এসে মৃত প্রাণীটি পরীক্ষা করেন এবং পরে মাটি চাপা দেন। তবে প্রাণীটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনও বিজ্ঞানীদের কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

বঙ্গোপসাগরে ইন্দোপ্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস নামের একটি মাত্র প্রজাতির পরপইসের বিচরণ রয়েছে বলে জানান, ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) সর্বশেষ জরীপ মতে বঙ্গোপসাগরে মোট ১৩ জাতের সিটাসিয়ান বা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র এক প্রজাতির পরপরইস, ৮ প্রজাতির ডলফিন ও ৪ প্রজাতির তিমি রয়েছে। পরপইসের প্রাণীতাত্ত্বিক বা বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস।

বিজ্ঞানীরা জানান, পরপইস, ডলফিন ও তিমিসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিশাল পরিবেশগত সেবার কারণে এদেরকে ইকোসিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার বা বাস্তুসংস্থান প্রকৌশলী বলা হয়। এরা তাদের স্বভাবজাত বা আচরণগত প্রকৌশলের মাধ্যমে শুধু নিজেদের বসবাসের পরিবেশ ঠিক রাখেনা, অন্য প্রাণিদের জন্যও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেয়। যে কারণে, যে পরিবেশে এরা বসবাস করে সেই পরিবেশকে একটি উর্বর, জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ নির্মল পরিবেশ হিসাবে ধরা হয়।

২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে স্তন্যপায়ী ডলফিন, পরপইস ও তিমি সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে তালিকাভূক্ত। এগুলো শিকার করা, খাওয়া, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিবহণ ও ক্রয়বিক্রয় করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলামায় তামাক ক্রয় কেন্দ্রে ডাকাতি
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা দ্রুত উচ্ছেদ করুন