কক্সবাজার সৈকতে পূজারী-দর্শনার্থীর ঢল

বৈরী আবহাওয়ায় প্রতিমা বিসর্জন

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ at ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রতি বছর লাখো মানুষের ঢল নামতো দেশের বৃহত্তম বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানে। কিন্তু এবার ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনুষ্ঠান কিছুটা ম্লান হলেও উচ্ছ্বাস ছিল বরাবরের মতো। সমুদ্র স্নান, নাচ, গান, আনন্দে মেতেছে হাজারো পূজারী ও দর্শনার্থী।

আমাদের কক্সবাজার ও রামু প্রতিনিধি জানান, গতকাল মঙ্গলবার দুর্গাপূজার শেষ দিন বিজয়া দশমীর আয়োজন করা হয় সৈকতের লাবনী পয়েন্টে। শুধুমাত্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টের এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা প্রায় ১৫০টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, একই সময়ে রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত ও রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

রামুর কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরের পুরোহিত সুবীর ব্রাহ্মণ চৌধুরী বলেন, এবার মা দুর্গা এসেছেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে। যাচ্ছেনও ঘোড়ায় চড়ে। এ কারণে এবার আমরা ঝড় ঝাপটার আশঙ্কা করেছি। তাই মা দুর্গার কাছে আমাদের বিশেষ প্রার্থনা ছিলপ্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মানুষ যেন রক্ষা পান।

গতকাল ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে আসতে শুরু করে প্রতিমাবাহী ট্রাক। তবে বৃষ্টির কারণে সৈকতে একটু দেরিতে নামানো হয় প্রতিমা। বিকালে সৈকতের বালুচরে রাখা দুর্গা প্রতিমা ঘিরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা। শুধু তাই নয়, বৈরি আবহাওয়া হলেও নাচেগানে এক অন্য রকম আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতে। সন্ধ্যায় বিসর্জন মঞ্চ থেকে মন্ত্র উচ্চারণ শেষে সমুদ্র সৈকতে শুরু হয় বিসর্জন। এরপর একে একে পূজা মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় সাগর সৈকতে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জল করের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফা, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, কানিজ ফাতেমা মোস্তাক এমপি, জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি নজিবুল ইসলাম প্রমুখ।

পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল কর জানিয়েছেন, জেলায় ৩১৫টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫১টি প্রতিমা পূজা আর ১৬৪টি ঘট পূজা। এ বছর জেলার দেড় শতাধিক প্রতিমা সৈকতে বিসর্জন দেওয়া হয়। তিনি বলেন, প্রতিমা বিসর্জন নিরাপদ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনি গড়ে তোলা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠান দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ বছর অনুষ্ঠান উদযাপনে একটু সমস্যা হয়েছে।

কাপ্তাই হ্রদ : আমাদের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, কাপ্তাই হ্রদে দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে রাঙামাটিতে শারদীয় দুর্গোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। গতকাল সন্ধ্যায় জেলার বিভিন্ন মন্দিরের পূজারী এবং ভক্তরা হ্রদে দেবী দুর্গার বিসর্জনে অংশ নেন। পূজোর পুরো সময় স্থানীয় প্রশাসনের নিরাপত্তা জোরদার ছিলো।

এদিকে কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীতে নৌ র‌্যালির মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে বির্সজন দেয়া হয়েছে। কাপ্তাই উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদ বিজয়া দশমী উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরেও আয়োজন করেছে বিজয়া নৌ র‌্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা। কর্ণফুলী নদীর উপর ফেরিতে মঞ্চে ২ ঘণ্টাব্যাপী চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার প্রধান অতিথি ছিলেন। দীপক কান্তি ভট্টাচার্য্যের সভাপতিত্বে ও বাবলু বিশ্বাস অমিতের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন অমলেন্দু হাওলাদার, অরূপ মুৎসুদ্দী, অংসুইছাইন চৌধুরী, দীপ্তিময় তালুকদার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মফিজুল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন প্রমুখ।

ফিরিঙ্গী বাজার ব্রিজঘাট : ৩৩ নং ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবের উদ্যোগে ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ব্রিজঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল ৬০টি প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। এ সময় বিভিন্ন পূজা মন্ডপের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ উপস্থিত ছিলেন ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, . লীগ নেতা রুহুল আমিন তপন, তারেক ইমতিয়াজ ইমতু, রনজিত পাল, জাহাঙ্গীর আলম, তারাপদ দাশ, সিজেকেএস কাউন্সিলর সামিউল হাসান রুমন প্রমুখ।

হাটহাজারী : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারীতে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এবার উপজেলার ১১৩টি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ১৩টি সহ মোট ১২৬টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল উপজেলার আওতাধীন ধলই, মির্জাপুর, মেখল, চৌধুরীহাট, শিকারপুর, বুড়িশ্চর পৌরসভা পূজা মন্ডপ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দিয়ে পূজার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি : ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, গত সোমবার ফটিকছড়ি উপজেলাধীন ভূজপুর, ফটিকছড়ি পৌরসভা, নাজিরহাট পৌরসভা ও দক্ষিণ ফটিকছড়ির বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী। তিনি বলেন, এ দেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকেই এ দেশে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিদ্যমান। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি কেউ নস্যাৎ করতে পারবে না। প্রতিটি ধর্মের মূল মর্মবাণী হচ্ছে শান্তি ও মানবতার জয়গান। মানবতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মূল্যায়ন করলেই ধরনীতে শান্তি অবধারিত। সমাজের অন্যায়, অবিচার, অশুভ শক্তি দমনের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে তার সাথে ছিলেন দলটির ফটিকছড়ি উপজেলার আহ্বায়ক এইচ এম মঞ্জুরুল আনোয়ার চৌধুরী, আবু তৈয়ব, মোজাম্মেল হক, মো. হাসান, মো. হাবিবউল্লাহ, মো. বাবুল, মো. জোবায়েদ প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সংগ্রামী জীবন সকলের জন্য অনুসরণীয়
পরবর্তী নিবন্ধপতেঙ্গায় ২ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন মেয়র