কক্সবাজার সৈকতে থেমে নেই দখল উচ্ছেদের ১০ দিন না যেতে আবার দখল

বাধা দিলে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে অপবাদ দেয়া হচ্ছে

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দখল থামছে না কিছুতেই। দেশের পটপরিবর্তনের পর সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে নতুনভাবে দখল করে তৈরি করা হয়েছে অনেক ঝুঁপড়ি দোকান। এছাড়া সৈকত এলাকায় যেখানেসেখানে সড়কউপসড়ক দখল করে যত্রতত্র বসানো হয়েছে হকারের দোকান। উচ্ছেদের ১০ দিন না যেতে আবার দখল করে বসানো হয়েছে ঝুপড়ি দোকান ও হকার। প্রশাসনের কেউ বাধা দিলে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে অপবাদ দেয়া হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, গত ১৫ বছর একদল চুষে খাওয়ার পর এখন নতুন করে দখলে মেতেছে অন্যরা। প্রশাসন দফায় দফায় অভিযান চালিয়েও দখলদারদের কবল থেকে সৈকতকে রক্ষা করতে পারছে না! এতে সৌন্দর্যহানি ঘটছে এই পর্যটন শহরের। যার কারণে অস্বস্তি ও বিড়ম্বনায় পড়ছেন পর্যটকরাও। শহরের পর্যটন জোন ঘুরে দেখা গেছে, গত তিন মাস ধরে পর্যটনজোন কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট সৈকতের বালিয়াড়ি ও সড়ক দখল করে বসানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ দোকান ও হকার। স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি বিভিন্ন হকার সমিতির নাম দিয়ে দখল অব্যাহত রেখেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, স্থানীয় যুবদল নেতা জয়নাল আবেদীন, লাল মিয়া, জাকির হোসেন, গুরা মিয়া, জালাল, আসাদ, হাবিবসহ ৮১০ জনের একটি সিন্ডিকেট হকার ও ঝিনুক ব্যবসায়ী সমিতির নাম দিয়ে এই দখল তৎপরতায় জড়িত। তারা মাসিক ও দৈনিক ভিত্তিতে হকার ও দোকানদারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে।

সমপ্রতি সৈকতের বালিয়াড়িতে বসানো সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্ট আদেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ও ৮ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন সৈকতের এই তিন পয়েন্ট থেকে বালিয়াড়িতে বসানো অন্তত ৫০০ ঝুপড়ি দোকান উচ্ছেদ করে দেয়। এছাড়া সড়ক দখল করে বসানো অন্তত দুই হাজার হকার বসতেও কড়াকড়ি আরোপ করে। কিন্তু ১০ দিন যেতে না যেতে আবারও বসেছে সেইসব ঝুপড়ি দোকান ও হকার। প্রশাসনের চোখ এড়াতে ঝুঁপড়িগুলো ত্রিপলের বদলে ছাতা মুড়িয়ে বসানো হয়েছে।

সরেজমিনের ঘুরে দেখা যায়, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে উচ্ছেদ হওয়া সেই দোকানগুলো নতুন করে সেখানে বসানো হয়েছে। সুগন্ধা পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের তথ্য কেন্দ্রের পেছনে একটি ঝিনুক মার্কেটে অন্তত ২০০ দোকান বসেছে। এই মার্কেটের উল্টো পাশে বসেছে আরও ২০০ এর মতো ঝিনুক, ভাজা মাছ, চটপটিসহ বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট। এই দুই মার্কেটের মাঝখানেও বসেছে হকার।

কয়েকজন দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আর যাতে ঝামেলা না হয় তার জন্য প্রশাসনসহ সবকিছু ম্যানেজ করতে ঝিনুক সমিতির নেতাদের দোকান প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

তবে সুগন্ধা ঝিনুক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও যুবদল নেতা জয়নাল আবেদীন অভিযোগ অস্বীকার বলেন, ‘আমরা সমিতির সদস্যরা তিনহাজার টাকা করে তুলে দোকান মেরামত করেছি। কাউকে ম্যানেজ করার জন্য টাকা তুলিনি।’ তিনি বলেন, সৈকতে দালান উঠলেও উচ্ছেদ হয় না। উচ্ছেদ হয় গরীব হকারদের ঝুঁপড়িগুলো।

সৈকত এলাকার রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত জেলা প্রশাসনের লোকজনসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও পুলিশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে। এ সুযোগে কিছু দখলদার প্রতিদিন সৈকতের কোথাও না কোথাও দখল করছে। বাধা দিলে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে অপবাদ দেয়।

এ ব্যাপারে কঙবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সৈকত ব্যবস্থাপনায় সঠিক কোনো পরিকল্পনা নেই। সবাই সৈকতে কর্তৃত্ব চায়। এতে দিনদিন অব্যবস্থাপনার কারণে সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।’

কঙবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সৈকতের বালিয়াড়িতে স্থায়ী দোকান বসানোর সুযোগ নেই। হকারদের দাবির প্রেক্ষিতে সাময়িক সময়ের জন্যে বিকেলে নেমে রাতে চলে আসার জন্যে ভ্রাম্যমাণ দোকানদারদের অনুমতি রয়েছে। কেউ প্রশাসনের নামে টাকা তুলছে; অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০ লেইন প্রকল্পের সমীক্ষার কাজ জুনের আগেই শেষ
পরবর্তী নিবন্ধজুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা আগামী সপ্তাহে : মাহফুজ