একদিকে বঙ্গোপসাগর, অন্যদিকে সদা প্রবহমান বাঁকখালী নদী; তারই মাঝে অবস্থান পর্যটন শহর কক্সবাজারের। অথচ একটু ভারী বৃষ্টি হলেই ডুবে যাচ্ছে এই পর্যটন শহরের রাস্তাঘাট। বন্যার পানি ঢুকে যাচ্ছে বাড়ীঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তৈরি হচ্ছে চরম জনভোগান্তি। কক্সবাজার পৌরসভা আজ রোববার থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।
গতকাল শনিবার বেলা ১১ টায় অনুষ্ঠিত কক্সবাজার পৌরসভার এক সভায় জানানো হয়, কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতার পেছনে চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে কক্সবাজার পৌরসভা। এগুলো হচ্ছে নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড় কাটা, বাসা–বাড়ির ময়লা–আবর্জনা নালায় ফেলার কারণে নালা ভরাট হয়ে যাওয়া এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবারের ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজার পৌরসভার বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর পেছনের কারণ চিহ্নিত করার জন্য কক্সবাজার পৌরসভার উদ্যোগে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠনের পর তারা প্রধানত চারটি কারণকেই দায়ী করেন। এরই প্রেক্ষিতে শনিবার (গতকাল) অনুষ্ঠিত পৌর পরিষদের এক সভায় রোববার (আজ) থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে সাথে নালা–নর্দমা পরিষ্কারে অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। অন্যান্য সমস্যাসমূহ সমাধানেও উদ্যোগ নেওয়া হবে। গত বুধবার দিবাগত রাত ও বৃহস্পতিবার সকালের ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি ঢুকে যায় বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তৈরি হয় চরম জনভোগান্তি। বিশেষ করে শহরের সাগর তীরবর্তী কলাতলী পর্যটন এলাকায় এ ভোগান্তি চরম আকার নেয়। এখানেই অন্তত ৩৫০টি হোটেল–মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউস রয়েছে। অধিকাংশ পর্যটক বেড়াতে এসে এখানেই ওঠেন। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পর্যটনে অফ সিজন চলছে। তারপরও সাপ্তাহিক ছুটিতে কক্সবাজারে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ হাজার পর্যটক আসছেন।
পর্যটন ব্যবসায়ী আশরাফ আলম জানান, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বৃহস্পতিবার শহরের পর্যটন এলাকার প্রায় সব রাস্তাঘাট তিন–চার ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। পর্যটকরা হোটেল কক্ষে বন্দী হয়ে পড়েন।
কলাতলী সড়কের একটি রেস্তোরাঁর মালিক আবু মুছা বলেন, বৃহস্পতিবারের ভারী বৃষ্টিপাতে আমার রেস্তোরাঁতেও পানি ঢুকে পড়ে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বর্ষায় ব্যবসা বন্ধ রাখতে হবে। বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে শুধু কলাতলী নয়, কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক ও ১২টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ড্রেন উপচে ঢলের পানি বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয় পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়া ও সমিতি পাড়া এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডের নুনিয়ারছড়া ও নতুন বাহারছড়া এলাকায়। এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। অনেক বাড়িতে রান্নাবান্নাও বন্ধ হয়ে যায়।