আমরা একেবারে চলে এলাম স্বপ্ন ছোঁয়ার কাছাকাছি। আর বাকি মাত্র ৬ মাস। ঠিক এই কয়েকদিন পরেই রেল যাবে কক্সবাজার। ট্রলিতে চড়ে রেলমন্ত্রীর প্রকল্প পরিদর্শন করলেন। দেখলেন ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দৈনিক আজাদীতে গত ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারবাসী যেমন অপেক্ষায় রয়েছে তেমনি সারাদেশের মানুষ ট্রেনে করে পর্যটন নগরী কক্সবাজার আসার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে চলাচলের জন্য ট্যুরিস্ট কোচের মতো উন্নতমানের কোচ দ্বারা ট্রেন চালানো হবে। এজন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি কোচ কেনা হবে যেগুলোর জানালা সুপ্রশস্ত। এতে মানুষ অনায়াসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবে।
কাজের অবগতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ৬০ কিলোমিটার রেললাইন সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী বছর জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত এ রেল যোগাযোগ চালু হলে দেশের পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট একশ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মিত হচ্ছে।
পুরো প্রকল্পে ৩৯টি মেজর ব্রিজ এবং ২৪২টি কালভার্ট নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। হাতি চলাচলের জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। রেল লাইনটা নির্মিত হলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে। পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। পর্যটকদের জন্য নিরাপদ আরামদায়ক, সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার নিশ্চিত করা হবে। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা সম্ভব হবে।
প্রাবন্ধিক আবুল কাসেম ভূঁইয়া তাঁর এক লেখায় বলেছেন, কক্সবাজার রেল সার্ভিস চালু হলে শুধু চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়া যাবে না, রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের কলকাতা থেকে সরাসরি রেল সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কক্সবাজার পর্যন্ত রেল সার্ভিস চালুর ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। এই রুটে সর্বাধুনিক মানসম্পন্ন দ্রুতগামী রেল সার্ভিস চালু করা হবে। পর্যটকদের দেওয়া হবে নানা সুযোগ–সুবিধা। আরামদায়ক, নিরাপদ এবং দ্রুতগামী রেল সার্ভিস হওয়ার কারণে পর্যটকরা রেল সার্ভিসকে প্রাধান্য দেবে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেল সার্ভিস চালু হলে কক্সবাজারের গুরুত্ব বহু গুণ বেড়ে যাবে।
কক্সবাজার হবে এশিয়ার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। শুধু তা–ই নয়, কক্সবাজারের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে যাবে। তখন পর্যটন খাত থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় আসবে। তাছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের মৎস্যশিল্প, লবণশিল্প, বনজ শিল্পের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের দুর্ভোগের অবসান হবে। আন্তঃএশিয়া রেল সার্ভিস চালুর যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাও বাস্তবায়ন হবে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেল সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের হলেও বর্তমান সরকার এর বাস্তব রূপ দিতে যাচ্ছে। অতীতে কোনো সরকার এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিতে সক্ষম হয়নি। সরকারের উদ্যোগে জনসাধারণ বেশ আনন্দিত।
এই বৃহৎ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৫১২ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ সরকার। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ১০৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা, কোরিয়ার একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগ করছে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথ হবে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয়। সবুজ প্রান্তর, পাহাড় এবং গহিন বনের ভেতর দিয়ে রেল যাতায়াত করবে। পর্যটকরা রেলে বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবেন। রেলের অভ্যন্তরে পর্যটকদের জন্য থাকবে সেবার সর্বোত্তম ব্যবস্থা।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথের কাজ শেষ হতে আর বেশি সময় লাগবে না। তবে কালুরঘাট সেতুটি এখন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এই সেতুটি অনেক পুরোনো ও পরিত্যক্ত। এই সেতু দিয়ে দ্রুতগামী রেল চলাচল করতে পারবে না। এখানে দ্রুত নতুন রেলের ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। তবেই কক্সবাজার রেল সার্ভিস চালু করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। আমরা কক্সবাজার রেলপথের সফল বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার যে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।