স্বাধীনতার ৫২ বছর পর পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হতে যাচ্ছে আগামী ১১ নভেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ নভেম্বর সকালে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন ভবন থেকে নবনির্মিত দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী যে ট্রেন উদ্বোধন করবেন তা গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে সন্ধ্যা ৭টায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম।
গতকালের নতুন ট্রেনটি চালিয়ে নিয়েছেন লোকোমাস্টার সাজু কুমার দাশ। তার সাথে ছিলেন সহকারী লোকোমাস্টার বেলায়েত হোসেন জাহিদ। এছাড়াও এই ট্রেনে করে গেছেন গত ৫ নভেম্বর প্রথম বাংলাদেশ রেলওয়ের জিআইবিআর স্পেশাল ট্রেন চালিয়ে কক্সবাজার যাওয়া লোকোমাস্টার মাহফুজুর রহমান এবং তার সহকারী লোকোমাস্টার রোকন মিয়া। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তত্ত্বাবধানে কঠোর নিরাপত্তায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ট্রেনের ১৫ বগির সাথে অতিরিক্ত ৪ বগিসহ মোট ১৯টি নতুন বগি এবং ২টি নতুন আধুনিক উচ্চ গতির ইঞ্জিনের কম্পোজিশনে ট্রেনটি কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া হয়। দুই ইঞ্জিন আর ১৯ আধুনিক নতুন বগি নিয়ে ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কক্সবাজার পৌঁছতে সময় লেগেছে ৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। তবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হলে তখন প্রথমে ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট, পরবর্তীতে আরো কম সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন।
উদ্বোধনী ট্রেনের ১৫ বগির বাইরে অতিরিক্ত যে ৪ বগি গেছে তাতে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম, বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলীসহ রেলওয়ের ১০০ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী কক্সবাজার গেছেন বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্তে প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, আগামী ১১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে দোহাজারী–কক্সবাজার নবনির্মিত রেললাইনে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী ট্রেনের ১৫ নতুন বগি লক করা অবস্থায় কক্সবাজার যাচ্ছে।
অতিরিক্ত ৪ বগিতে আমরা রেলের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা যাচ্ছি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের তত্ত্বাবধানে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে (তখন দুপুর দেড়টা) চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কঙবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
ঐদিন প্রধানমন্ত্রী কঙবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে ট্রেনটি উদ্বোধনের পর রামু স্টেশন পর্যন্ত যাবে। প্রধানমন্ত্রী যে ট্রেনের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন সেই ট্রেনের আগে পিছে দুটি নতুন ইঞ্জিন এবং ১৫টি নতুন ব্র্যান্ড নিউ বগির কম্পোজিশনে সাজানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ট্রেনের আগে নতুন একটি ইঞ্জিন থাকবে। এই ইঞ্জিনটি লাইন ঠিক আছে কিনা দেখবে। উদ্বোধন উপলক্ষে মোট ৪টি নতুন ইঞ্জিন কঙবাজার যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে মোট ৪ জন লোকোমাস্টার (ট্রেন চালক) এবং ৪জন সহকারী লোকমাস্টার সাথে যাচ্ছেন বলে জানিয়ে ডিআরএম সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ট্রেন কে চালাবেন (লোকোমাস্টার) তা এখনো ঠিক হয়নি। এসএসএফ যাদের ক্লিয়ারেন্স দিবেন তারা উদ্বোধনী ট্রেন চালাবেন। আমরা চারজনের নামের তালিকা পাঠিয়েছি।
আগামী ১১ নভেম্বর দোহাজারী–কঙবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন উপলক্ষে কঙবাজার আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং এবং রামু স্টেশন দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এই দুটি স্টেশন এখন সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কঙবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া উদ্বোধনী ট্রেনটি কঙবাজার স্টেশনে সন্ধ্যা ৭টায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ডিআরএম প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। এর আগে গত ৫ নভেম্বর বরিবার বাংলাদেশ রেলওয়ের জিআইবিআর স্পেশাল ট্রেনের মাধ্যমে পর্যটন নগরী কঙবাজারবাসীর সাথে ট্রেনের প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে। ঐদিন কঙবাজারে সমুদ্রের গর্জনের সাথে রেলের ঝিকঝিক শব্দ আর হুইসেলের স্থায়ী সেতুবন্ধন রচিত হয়।