কক্সবাজার পুলিশের কর্মকর্তা থেকে কনস্টেবল সবাইকে বদলি

এটাকে পরীক্ষামূলক পরিবর্তন বলতে পারেন : রেঞ্জ ডিআইজি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

ইমেজ সংকটে পড়া পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে কক্সবাজার জেলার পুরো পুলিশ বাহিনীকে ধাপে ধাপে পরিবর্তন করা হচ্ছে। গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত বদলির আদেশ পাওয়া পুলিশ সদস্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪৭ জনে। এর মধ্যে রয়েছেন পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ আট শীর্ষ কর্মকর্তা, ৫৩ জন পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর), ১৩৯ জন উপপরিদর্শক (এসআই), ৯২ জন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই), ১ হাজার ৭৫ জন কনস্টেবল। পর্যায়ক্রমে বদলি হওয়া সদস্যরা ছাড়পত্র নেবেন এবং নিয়োগকৃতরা যোগদান করবেন। কক্সবাজারে শূন্য পদে ইতোমধ্যে পুলিশ সুপারসহ আট শীর্ষ কর্মকর্তা যোগদান করেছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে যোগ দিচ্ছেন ৫৩ জন পুলিশ পরিদর্শক, ২১৫ জন এসআইএএসআই এবং ৭৩৪ জন কনস্টেবল।

পুলিশের এই গণবদলি শুদ্ধি অভিযান কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন মৃদু হেসে বলেন, না শুদ্ধি অভিযান নয়। শুদ্ধি অভিযান হলেতো অশুদ্ধ যারা তাদেরকে পরিবর্তন করতাম। এটাকে রোটেশন বলতে পারেন। পরীক্ষামূলক পরিবর্তন বলতে পারেন। আমরা চাইছি একটি জেলায় কর্মরত সকলকে পরিবর্তন করে তাদের স্থলে নতুন একটি সেট আপ দায়িত্ব নিয়ে কেমন করে। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে আমার পুলিশ সদস্যদের কাছে তিনটি জিনিস চেয়েছি। অভ্যন্তরীণ শৃক্সখলা, আচরণগত পরিবর্তন এবং অন্যান্য সংস্থার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। একজন মানুষ থানায় গেলে পারলে উপকার করো, না পারলে যেন ক্ষতি না করে। এই শ্লোগান নিয়ে মাঠে আছি। সব মিলিয়ে পরিচ্ছন্ন সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

প্রসঙ্গত: চলতি বছর ১৫ এপ্রিল আইজিপির দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই পুলিশ সদস্যদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বেনজির আহমেদ বলেছেন, জনগণের পুলিশ হতে হবে। কোনো দুর্নীতি বা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা মাদক কারবারে জড়িত বা কারবারিদের সহায়তা করছেন তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত দেখতে চাই। কয়েকটি মিটিংয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেছেন, আপনার এলাকায় হয় আপনি থাকবেন অথবা মাদক থাকবে। মাদক থাকলে আপনি থাকতে পারবেন না, আপনি থাকলে মাদক থাকবে না। ফোর্সের ডিসিপ্লিনের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় বা শৈথিল্য দেখানো যাবে না। ইতিমধ্যে পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছেন আইজিপি। এরই মধ্যে গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনার পর পুলিশের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। কক্সবাজার জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজাতে একযোগে সব সদস্যকে বদলির সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশের সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের প্রজ্ঞাপনে বদলির এই আদেশকে ‘জনস্বার্থে’ বলা হলেও পুলিশ সূত্র বলছে, সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জে শুদ্ধি অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। তারই প্রতিফলন কক্সবাজার পুলিশের এই গণবদলি।

চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গত ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের আগের পুলিশ সুপার (এসপি) এবি এম মাসুদ হোসেনকে বদলি করা হয়। তার জায়গায় হাসানুজ্জামানকে নিয়ে আসা হয় ঝিনাইদহ থেকে। এরপর গত ২১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.আদিবুল ইসলাম, কক্সবাজার সদরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজওয়ান আহমেদ, মহেশখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রতন কুমার দাশ গুপ্ত, ট্রাফিক পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল চন্দ্র বণিক, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মো. মতিউল ইসলাম এবং ডিএসবির সহকারী পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। এদের পরিবর্তে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলামকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মামুন আল ইসলামকে কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার পংকজ বড়ুয়াকে কক্সবাজার সদরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাহেদুল ইসলামকে মহেশখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার কাজি শাহবুদ্দিন আহমেদকে কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক), র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার মো. তফিকুল ইসলামকে চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এবং খাগড়াছড়ির সহকারী পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম শাহনেওয়াজকে ডিএসবি কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার বদলি করা হয় ৩৪ পরিদর্শকসহ ২৬৪ পুলিশ কর্মকর্তাকে। ২৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এক হাজার ৭৫ জন কনস্টেবলকে বদলি করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইচ্ছেমতো চলছে গাড়ি মোড়ে মোড়ে যানজট
পরবর্তী নিবন্ধইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের দূরদৃষ্টির ফসল আজাদী