মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন না হওয়া আসামিদের একইদিনে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ জামিন দেওয়ায় হাই কোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল। তবে তার লিখিত ব্যাখ্যা যথাযথ না হওয়ায় ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করেনি আদালত।
গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাই কোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানির জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন রেখেছে। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজের পক্ষে এদিন শুনানি করেন সাঈদ আহমেদ রাজা, আব্দুন নূর দুলাল। অপরপক্ষে ছিলেন এ বি এম আলতাফ হোসেন ও এস এম আমজাদুল হক। খবর বিডিনিউজের।
গত ২১ মে কক্সবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন আবেদন নাকচ হয় নয় আসামির; একই দিন বিধিবহির্ভূতভাবে ওই আসামিদের জামিন দেয় জেলা ও দায়রা জজ। ঘটনার বিবরণে বলা হয়, জমি দখল নিয়ে বিরোধের জেরে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি দেখানো ও আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ নয়জনের বিরুদ্ধে কঙবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রিনা। গত ১১ এপ্রিল এই মামলায় আসামিরা হাই কোর্টে আগাম জামিন চাইলে তাদের ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়ে কঙবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। এরপর গত ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে আসামিদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। কিন্তু একইদিন আসামিরা কঙবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন এবং তাদের আবেদন মঞ্জুর হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন করেন চেয়ারম্যান রিনা। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা ও দায়রা জজকে তলব করে হাই কোর্ট।
হাকিম আদালতের মামলার বরাতে হাই কোর্টে দরখাস্তকারীর আইনজীবী বলেন, ২১ মে দুপুর ১২টার দিকে ৯ আসামি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত তাদের আবেদন নাকচ করে। এদিকে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের আদেশের কপি পাননি–উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন। বিচারিক হাকিম আদালতের জামিন আবেদন নাকচের আদেশ ও অন্যান্য কাগজপত্র দায়রা জজ আদালতে দাখিল করা হয়নি। আসামিদের হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয় বলে আদেশে উল্লেখ করেছেন জেলা দায়রা জজ। অথচ ৯ আসামিকে হাজতেই নেওয়া হয়নি। জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের কীভাবে জামিন দিয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করতে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। আদেশে মামলার যাবতীয় নথিও আনতে বলা হয়।
গতকাল শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, আসামিরা হাজতে যাওয়ার পর তাদের পক্ষে নিয়ম মেনে ওকালতনামা নিয়ে জামিনের আবেদন করলে এবং জামিন দিলে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটত না। আর দায়রা জজকেও হাই কোর্টে ডাকতে হত না।