কক্সবাজার উপকূলে ১০ হাজার কচ্ছপের বাচ্চা অবমুক্ত

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার | বৃহস্পতিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২৫ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার উপকূলে কচ্ছপের ডিম সংরক্ষণ ও বাচ্চা প্রজননে চলতি মৌসুমে বেশ তোড়জোড় দেখা গেছে। এতে বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) বেশ সাফল্যও দেখিয়েছে। তাদের হিসাব মতে, চলতি মৌসুমে শুধুমাত্র কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কচ্ছপের বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। আরো বেশ সংখ্যক ডিম বাচ্চা ফোটার অপেক্ষায় রয়েছে।

নেকম’র দেয়া তথ্য মতে, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে জলপাই রঙা সামুদ্রিক কাছিম ডিম দিতে আসে। বেশ কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার উপকূলে বনবিভাগ ও নেকম যৌথ ব্যবস্থাপনায় এইসব ডিম দিতে আসা কাছিমের নিরাপত্তা ও বাচ্চা ফোটানোর নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে। কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২টির অধিক পয়েন্টে ডিম সংগ্রহ করে তা ফোটানোর জন্য নার্সারি স্থাপন করা হয়। এসব নার্সারিতে প্রায় ২৬ হাজার ৭৭০টি ডিম সংগ্রহ করে তা ফোটানোর জন্য বিশেষ ধরনের পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। সেসব ডিম থেকে এখন পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়েছে। এসব বাচ্চার শতভাগ সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল বুধবার উখিয়ার ইনানী উপকূলে ২৫০টি বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। সব বাচ্চা অলিভ রিডলি প্রজাতির।

অন্যদিকে পৃথকভাবে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনেও সংরক্ষণ করা ডিম থেকে ফুটন্ত প্রায় তিন হাজার সংখ্যক কচ্ছপের বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে অন্তত ১০ হাজার বাচ্চা অবমুক্ত করা হয়েছে।

সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৪টি স্পটে সামুদ্রিক কাছিম ডিম পাড়তে আসছে, যা এক দশক আগেও ছিল ৫২টি। অর্থাৎ হুমকির মুখে রয়েছে সামুদ্রিক কাছিমের ডিমপাড়ার স্থান সমূহ। কুকুর ও মানুষের উৎপাতে কচ্ছপের প্রজনন ঝুঁকির মুখে ডিম সংরক্ষণ ও প্রজননে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

নেকম প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কচ্ছপের বাচ্চার নিরাপদ প্রজননের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেয়া হয়। গড়া হয়েছে বিশেষ নার্সারি। এসব নার্সারিতে কক্সবাজার উপকূলের ১২টি পয়েন্টে থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ৬ হাজার কাছিমের ছানা অবমুক্ত করা হয়েছে।

সেন্টমার্টিনে কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ, প্রজন ও অবমুক্তকরণে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে কাজ করেছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা সেন্টমার্টিনবাসী’র সদস্যরা। তারা ডিম সংগ্রহ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের নার্সারিতে সংরক্ষণ করেছেন। নার্সারি থেকে ইতিমধ্যে তিন হাজারের বেশি বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। এই সংগঠনের সমন্বয়ক আবদুল আজিজ বলেন, সেন্টমার্টিনে কুকুরের মারাত্মক উপস্থিতি রয়েছে। ফলে মৌসুমে উপকূলে ডিম পাড়তে আসা মা কচ্ছপগুলো কুকুরের আক্রমণে মারা যায়। আবার অরক্ষিত ডিমগুলো খেয়ে ফেলে। তাই আমরা দ্বীপের পরিবেশ রক্ষার্থে স্বউদ্যোগে ডিম সংগ্রহ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের নার্সারিতে সংরক্ষণ করেছি এবং বাচ্চা ফুটলে তা সাগরে অবমুক্ত করে দিচ্ছি। গতকাল বুধবার কক্সবাজার বনবিভাগ ও নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত নার্সারিতে জন্ম নেওয়া এসব কাছিমের বাচ্চা ঘটা করে অবমুক্ত করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মোল্যা রেজাউল করিম। এসময় তিনি বলেন, অলিভ রিডলি টারটল বা জলপাই রঙা সামুদ্রিক কাছিম এর বৃহৎ আবাস বঙ্গোপসাগর। সাগরের অনন্য জীববৈচিত্র্যের এই মূল্যবান অনবদ্য অনুষঙ্গটি সাগরের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ও ইকোসিস্টেম সংরক্ষণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, প্রতিবছর শীতের মৌসুমে এরা উপকূলবর্তী বালুকাময় সৈকতে আগমন করে ডিম পাড়া ও বাচ্চা ফোটানোর জন্য। কিন্তু ডিম পাড়ার জন্য কাছিম সৈকতে আগমন করলে সেখানে বিচরণকারী কুকুরের আক্রমণে ও অন্যান্য নানা কারণে কাছিম ও কাছিমের ডিম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মা কাছিম মারা যায়। তবে যত্ন নিলে কচ্ছপ, ডিম ও বাচ্চার কোনো ক্ষতি হতে পারে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবান্দরবানে বিএনপির অফিস ভাঙচুর, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
পরবর্তী নিবন্ধপোমরা শহীদ জিয়া নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান