দুই দিনব্যাপী চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ১০১ কিলোমিটার রেলপথ থেকে শুরু করে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনের প্রতিটি কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ আহমেদ। গতকাল শেষদিন তিনি সকালে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি স্টেশন বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ, স্টেশনের বিল্ডিংয়ের প্রতিটি ফ্লোর, স্টেশনের হোটেল, ইন্টেরিয়র কাজ, প্লাটফর্ম, ট্র্যাক, সিগন্যালিং সিস্টেম, ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেমসহ প্রতিটি কাজ সরেজমিনে দেখেছেন বলে জানান। পরিদর্শনকালে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের একমাত্র আইকনিক স্টেশন বিল্ডিংয়ের উপরের শেড থেকে পানি চুইয়ে স্টেশনের প্লাটফর্ম হয়ে যাত্রীদের গায়ে পড়ার বিষয়টি ডিজাইনের বড় ত্রুটি বলে মনে করেন জিআইবিআর প্রধান।
গত মঙ্গলবার দুইদিনের সফরে দোহাজারী–কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সরেজমিনে পরিদর্শনে যান সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ আহমেদ। প্রথমদিনে তিনি দোহাজারী–কক্সবাজার ১০১ কিলোমিটার রেল লাইনের মধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত প্রায় ৫৩ কিলোমিটার রেলপথ ট্রেনে করে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। গতকাল বুধবার চকরিয়ার পর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অবশিষ্ট রেলপথ এবং দেশের একমাত্র আইকনিক রেল স্টেশন পরিদর্শন করেন।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের সবচেয়ে বড় ত্রুটি দেখা গেছে কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশন নির্মাণে। বর্ষা মৌসুমে এই আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের ওপর থেকে পানি চুইয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে প্রবেশ করছে। উপর থেকে প্লাটফর্মে পড়া পানি যাত্রীদের গায়ে পড়ছে। পানি পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ আহমেদ আজাদীকে বলেন, এতো উচু করে স্টেশনের শেডের ডিজাইন করা হয়েছে, আমার মনে হয় ডিজাইনটা ঠিক মতো করা হয়নি।
বাংলাদেশের বাস্তবতার নিরিখে আরো অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করেই ডিজাইন করা দরকার ছিল। স্টেশনের ওপর থেকে বৃষ্টির পানি প্লাটফর্মে পড়বে, সেই পানি যাত্রীদের গায়ে পড়বে। এটা একটা বড় ক্রটি মনে হয়েছে। আমি প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারী সংস্থার প্রতিনিধিদের জিজ্ঞেস করেছি ‘ওনারা বলেছেন ডিজাইন যেভাবে করা হয়েছে তারা সেই ভাবেই কাজ করেছেন।’ স্টেশন বিল্ডিংয়ের ডিজাইনের মধ্যে মনে হয় সমস্যা ছিল। এগুলো সব আমি আমার রিপোর্টে উল্লেখ করবো। রিপোর্ট দিতে একটু সময় লাগবে জানিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ আহমেদ আজাদীকে বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিয়ে দেবো। রিপোর্টে এসব বিষয়ে সুপারিশ দেবো।
তিনি আরো বলেন, আইকনিক স্টেশন ভবন পরির্দশন করেছি। এখনো সব কাজ শেষ হয়নি, কিছু কাজ বাকি আছে। এখনো স্টেশনের হোটেল রুম গুলোতে কিছু কাজ বাকি আছে। ইন্টেরিয়র, ফার্নিসার, লাইটিংয়ের কাজ বাকি, জেনারেটরের কাজ বাকি আছে। প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারী সংস্থার প্রতিনিধিরাও ছিলেন। তারা জানিয়েছেন অবশিষ্ট যে কাজ গুলো বাকি আছে সেগুলো প্রজেক্ট টাইমের মধ্যে তারা শেষ করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শেষ পর্যায়ে এসে এই মেগা প্রকল্পের নানান ক্রটি–বিচ্যুত ধরা পড়ছে। দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার বহুল আলোচিত এই মেগা প্রকল্পের কাজ নিয়ে উঠেছে নানা অনিয়মের অভিযোগও। এতো বিশাল মেগা প্রকল্পের কাজে একাধিক ত্রুটি ধরা পড়ার কারণে এ নিয়ে এখন তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। এরই মাঝে প্রকল্পের পুরো কাজ সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছেন সরকারি রেল পরিদর্শক। তার পরিদর্শন রিপোর্টের উপরই ভিত্তি করে প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ কিস্তির টাকা ছাড় দেয়া হবে। তাই সরকারি রেল পরিদর্শ (জিআইবিআর) ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ আহমেদ–এর এই পরিদর্শন রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথটি ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১ ডিসেম্বর থেকে। বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম–কক্সবাজারের একটি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে।