চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলার ৬৫ হাজার একর জমিতে হচ্ছে বাগদা চিংড়ি চাষ। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে কক্সবাজার জেলা থেকে উৎপাদিত চিংড়ি রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে রাখতে পারবে বড় অবদান। ইতোমধ্যে জেলার ৫ শতাধিক প্রজেক্টে চিংড়ি চাষ ও আহরণ শুরু হয়েছে। তবে বর্তমান বিশ্ববাজারে চিংড়ির চাহিদা ক্রমেই বাড়লেও চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণেও চিংড়ি রপ্তানি কমেছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে চিংড়ি খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ কম। রপ্তানি বাড়াতে চিংড়ি উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি খাতের মতো চিংড়ি খাতেও ভর্তুকির দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় অন্তত ৬৫ হাজার একর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হচ্ছে চলতি মৌসুমে। ইতোমধ্যে চিংড়ি চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
মহেশখালীর চিংড়ি পোনা সরবরাহকারী হোয়ানক ইউনিয়নের হরিয়ার ছড়া গ্রামের সফিউল আলম বলেন, চলতি মৌসুমে স্থানীয় পোনার চাইতে হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনার চাহিদা বেশি। ইতোমধ্যে ৪/৫টি প্রজেক্টে প্রায় ৭০ লাখ চিংড়ি পোনা সরবরাহ করা হয়েছে। গত মৌসুমে চিংড়ি চাষিরা লাভবান হওয়া চাষিদের মাঝে আগ্রহ বেড়েছে। মহেশখালীর চিংড়ি চাষি হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল করিম জানিয়েছেন, বর্তমানে বাগদা চিংড়ির মূল্য বেশি থাকায় সবাই প্রজেক্টের দিকে নজর দিয়েছে। আমি চলতি মৌসুমে তিনটি চিংড়ি প্রজেক্টে প্রায় ২০ লাখ টাকার পোনা দিয়েছি। চিংড়ি চাষের অনুকূল পরিবেশ থাকলে আশা করছি মৌসুম শেষে অন্তত ১ কোটি টাকার চিংড়ি উৎপাদন হবে। তবে মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও হোয়ানকের হেতালিয়া মৌজা এলাকায় বেশ কিছু জমি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণে চলে যাওয়ায় আগের চেয়ে মহেশখালীতে চিংড়ি চাষ অনেকটা কমে গেছে।
গত বর্ষা মৌসুমে চিংড়ির আশানুরূপ উৎপাদনের ফলে লাভের মুখ দেখায় চলতি মৌসুমে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজে নেমেছেন চিংড়ি চাষিরা। কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় শুরু হয়েছে চাষ।
এদিকে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই চিংড়ি রপ্তানি কমেছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে চিংড়ি খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ কম। এমন তথ্য জানিয়েছে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট। রপ্তানি বাড়াতে চিংড়ি উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া কৃষির মতো এই খাতেও ভর্তুকি দেয়ার দাবি জানাচ্ছে তারা। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট বলছে, বিশ্ববাজারে ক্রমেই চিংড়ির চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে চিংড়ির বৈশ্বিক বাজার ৩২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক চিংড়ির বাজার ইকুয়েডর ও ভারতের দখলে। দেশ দুটি যথাক্রমে বৈশ্বিক চাহিদার ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ ও ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের দখল কমে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য চিংড়ি রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা, থাইল্যান্ড ও চীন।
ফ্রোজেন ফিস ট্রেডার্স এন্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, চিংড়ি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী বাংলাদেশের একটি প্রধান অর্থকরী ফসল। মহেশখালীসহ কক্সবাজার জেলার আটটি উপজেলা চিংড়ি চাষের একটি উল্লেখযোগ্য জোন। মহেশখালীতে উৎপাদিত চিংড়ি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাই চিংড়ি চাষে আধুনিকায়ন ও যুগ উপযোগী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান–পূর্বক উৎপাদন বাড়াতে হবে।