৫ বছরের শিশু কন্যা নিশু (ছদ্মনাম)। চঞ্চলতায় মাতিয়ে তোলে বাড়ির চারপাশ। কিন্তু এই চঞ্চলতা তাঁর জন্য বিপদ বয়ে আনবে সে জানতো না। দীর্ঘদিন ধরে এক নরপশুর কুনজরে পড়ে সে। বাড়িতে তাঁর মা না থাকার সুযোগ কাজে লাগায় ওই নরপশু। নিশুকে ফুসলিয়ে ধর্ষণ চেষ্টা চালায় সে। যা রীতিমতো এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (৫ অক্টোবর) শহরের উত্তর তারাবনিয়ার ছড়া কমার্স কলেজ রোডে এ জঘন্য ঘটনা ঘটে।
ওই শিশুর মা জানান, স্বামী প্রবাসে থাকায় দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে একাই উত্তর তারাবনিয়ার ছড়ায় ফাতেমা মঞ্জিল নামের একটি বিল্ডিংয়ের প্রথম তলায় ভাড়া বাসায় বসবাস তাঁর। এক মেয়ে শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় শ্রেণীতে অধ্যায়নরত। নিশু এখনো স্কুলে ভর্তি হইনি।
তবে স্কুলে ভর্তির প্রস্তুতির জন্য প্রাইভেট ও আরবি শিখছে। বাড়ির সামনে মরিয়ম ষ্টোর নামে একটি মুদির দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনেন তিনি। সে সুবাদে দোকানের মালিক আশিকের (৪০) সাথে পরিচয়। বাজার বা কোথাও গেলে দোকানদার আশিকের কাছে বাসার চাবি রেখে যেতেন তিনি। নিশুদের বিভিন্ন সময় চকলেট ও চিপস দিতো সে। অনেক সময় তাঁর ক্যাশের পাশে নিশুকে বসিয়ে কৌশলে যৌন হয়রানি করতো। যা এই ঘটনার পর নিশোর মুখ থেকে সব খোলাসা হচ্ছে।
নিশুর মা আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় কাঁচা বাজারে যান তিনি। বাজারে যাওয়ার আগে দোকানদার আশিককে বাসার চাবিটি দিয়ে যায়। ওই সময় নিশুরা ৭টায় প্রাইভেটে গেলে চাবিটি দোকানদার আশিকের কাছে রাখার অনুরোধ করেন। সেই সুযোগটি কাজে লাগায় দোকানদার আশিক।
নিশুর মা বাজারে চলে গেলে সুযোগ বুঝে দোকানদার আশিক বাসায় ঢুকে যায়। এসময় নিশুর বোনকে মোবাইলে গেইম দিয়ে অন্যরুমে পাঠিয়ে দেয়। এরপর শুরু হয় নরপিশাচ আশিকের অপকর্ম। নিশুকে একা পেয়ে শরীরের স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থানে ধুমড়ে মুচড়ে কামড় দিয়ে যৌনাঙ্গের ভেতর আঙ্গুল চালায় জোর করে।
এতে ব্যথায় শিশু নিশু বাধা দিলেও কর্ণপাত করে না ওই দোকানদার। এক পর্যায়ে সে ধর্ষণ করার প্রস্তুতি নিলে শিশু নিশু চিৎকার দেয়। ওই সময় অন্য রুমে থেকে নিশুর বোন চলে আসলে দোকানদার আশিক কৌশলে সটকে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাক নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে অবোধ শিশু নিশু। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসায় আসলে মাকে সব ঘটনা খুলে বলে নিশু। যা শুনে রীতিমতো চমকে উঠেন তিনি।
নিশোর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এই ঘটনা শোনার পর আমি আতকে উঠি। চোখে মুখে অন্ধকার ভর করে। পরে এলাকার লোকজন নিয়ে লম্পট আশিককে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে নানা অপবাদ দেয়। এছাড়া কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ঘটনা লম্বা না করার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোকান খোলা থাকলেও অভিযুক্ত আশিক ছিল না। বেচাকেনা করছে তাঁর কর্মচারি। সেও মালিকের হদিস জানে না বলে জানায়।
স্থানীয়রা জানান, আশিক মহেশখালীর মাতারবাড়ী থেকে এসে এখানে দোকান করছে। তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অহরহ।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বলেন, বিষয়টি তিনি শুনে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। সরাসরি এসে প্রতিবেদককে কথা বলার জন্য বলেন তিনি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত আশিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তাঁকে রবিবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।