কক্সবাজারে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা

এম এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার | রবিবার , ৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে বোরো ফসলের মাঠে এখন ঘন সবুজের সমারোহ। যতদূর চোখ যায় ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজ পাতা ও শীষ। তার সাথে দুলছে কৃষকের স্বপ্নও। জেলার ৮টি উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। চলতি বোরো মৌসুমে ৫৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে ১৩৭ হেক্টর বেশি। কৃষকেরা আশা করছেন, আগামী ঈদুল ফিতরের আগে অথবা আগামী মাসের প্রথম দিকে তাদের কাঙ্ক্ষিত সোনালি ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন। বাজারে ধানের ভালো দাম থাকলে লাভবান হবেন তারা।

চকরিয়া ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের কৃষক রশিদ মিয়া জানান, ১৬ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো ধানের আবাদ করেছি। এর মধ্যে ব্রি৮৯ জাতের ধান আছে ৬ বিঘা। বাকি ১০ বিঘায় ব্রি ধান৯২, ব্রি ধান ৯৬, বঙ্গবন্ধু ধান ১০০, ব্রি৭৪ জাতের আবাদ করেছি। ভালো ফলন হওয়ায় এবার স্বপ্নও দেখছি ভালো দামের। আর কিছুদিন পরেই সোনালি ধানের ম ম গন্ধে ভরে উঠবে কৃষকের বাড়ির উঠান।

একই এলাকার বর্গা চাষি জয়নাল আবেদিন বলেন, প্রতিবেশীর নিকট থেকে ২ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে হাইব্রিড ধানের আবাদ করছি। ব্রি৭৪, ৭৫ এবং ৮৫ জাতের আবাদ করেছি। এ দোলায় (মাঠে) আমার মতো ফসল কারো ফলেনি। প্রতি বিঘায় ২৪ থেকে ২৬ মণ ধানের আশা করছি। প্রতিদিন এসে ধান কাটার স্বপ্ন দেখি। আশা করি আগাম ধান উঠলে ধানের বাজার ভালো পাবো। বাকি দিনগুলি মোটামুটি ভালোই চলে যাবে।

এদিকে ধান চাষে নানাভাবে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি হঠাৎ করে ডিজেল, সার, কিটনাশকের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে কৃষকদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানান, মজুরি, ডিজেল, সার, কিটনাশকের দাম অনেক বেশি। এ কারণে চলতি বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা যেন কাটছে না তাদের।

এরপরেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সবকিছু এড়িয়ে লাভবান হওয়ার আশা করছেন তারা।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে (২০২৩২৪ অর্থবছরে) কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলায় ২ লাখ ২৭ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জমি চাষাবাদের জন্য ২ হাজার ৭৬৫ হেক্টরে বীজতলা করা হয়েছিল। বোরো মৌসুমে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় তিন জাতের ফলনের আবাদ হয়েছে। তারমধ্যে চকরিয়া ৮৭২ হেক্টর, পেকুয়া ৩৫৭ হেক্টর, রামু ৩৩৪ হেক্টর, সদর উপজেলা ৩৪২ হেক্টর, উখিয়া ৩২৭ হেক্টর, টেকনাফ ৮৫ দশমিক ৬৭ হেক্টর, মহেশখালী ৩৫৭ হেক্টর, এবং কুতুবদিয়া ৮৮ হেক্টর।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বোরে ধানের ক্ষেত প্রকৃতির খেয়ালে গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করেছে। সবুজে ঘেরা মাঠে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধানগাছ ভাল রাখতে ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে ক্ষেতের ঘাস পরিষ্কার, সার ও বালাইনাশক ওষুধ প্রয়োগ ও পার্চিংসহ সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন। কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কবির হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ৫৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার ১৩৭ হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরোর বাম্পার ফলন হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী থেকে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা নিতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধএখন শুরু হবে রাউজানকে ধূমপান ও মাদকমুক্ত করার অভিযান