কক্সবাজারে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক সমাগমের প্রত্যাশা

ঈদ ও নববর্ষ মিলে টানা ছুটি

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | সোমবার , ৮ এপ্রিল, ২০২৪ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

নববধূর মতো সাজানো হচ্ছে কক্সবাজার শহরের পর্যটন এলাকা। উপলক্ষ ঈদের পরে আসবে বরবেশী পর্যটক! এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটির সাথে নববর্ষের ছুটি যুক্ত হয়ে টানা ছুটি থাকায় কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে ঈদের ছুটিতে হোটেলমোটেলের অধিকাংশ কক্ষই বুকিং হয়েছে।

হোটেল মালিকরা জানান, প্রতিবছর দুই ঈদ এবং থার্টিফার্স্টের ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এসময় হোটেলমোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। তবে গত ঈদে আশানুরূপ বুকিং হয়নি।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার হোটেলমোটেলগেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, এবারের ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার হোটেলমোটেলগেস্ট হাউস মালিক সমিতির মালিকানাধীন মধ্যম মানের তারকাবিহীন হোটেলগুলোতে ৪০% থেকে ৫০% ভাগ এবং তারকা হোটেলগুলোতেই ৫০% থেকে ৬০% ভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজারের তারকা হোটেলগুলোতে সর্বোচ্চ ৫ হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা আছে।

কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্টস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, তাদের মালিকানাধীন হোটেলগুলোতে ৬০% পর্যন্ত কক্ষ বুকিং হয়েছে।

সাগরপাড়ের তারকা মানের হোটেল কক্সবাজার টুডের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব গতরাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের হোটেলে ১৩ এপ্রিল একদিন মাত্র শতভাগ বুকিং রয়েছে। বাকী দিনগুলোতে ৪০%-৫০% এর বেশি বুকিং হয়নি।

সাগরপাড়ের আরেক তারকা মানের হোটেল সীগালের প্রধান নির্বাহী ইমরুল ছিদ্দিকী রুমী বলেন, ঈদের পরে দুয়েকদিন বুকিং ভাল আছে। বাকী দিনগুলোতে এখনও অনেক কক্ষ খালি আছে।

তবে বুকিং যাই হোক না কেন, এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটির সাথে নববর্ষের ছুটি যুক্ত হয়ে টানা সরকারি বন্ধ থাকায় কক্সবাজারের রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে মনে করছেন কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের (টোয়াক) সিনিয়র সহসভাপতি লাবু।

এবারের ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের চাপের কথা মাথায় রেখে কক্সবাজারঢাকা রুটে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামকক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো স্পেশাল কমিউটার ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের মাস্টার মেহেদী হাসান বলেন, পর্যটকদের জন্য স্পেশাল ট্রেনটি ঈদের পরদিন থেকে টানা ১০ দিন পর্যন্ত চলবে।

এবারের ঈদের ছুটিতে বিমানপথেও পর্যটকদের চাপ থাকায় বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ঢাকাকক্সবাজার রুটে ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসেন।

তিনি বলেন, ঈদের এক দিন আগ থেকে কক্সবাজার রুটে যাত্রীদের চাপ রয়েছে। এ রুটে পর্যটন মৌসুমে দৈনিক ২০টি থেকে ২২টি ফ্লাইট চলাচল করে।

টুরি‌্যস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ঈদসহ বিশেষ বিশেষ ছুটিতে কক্সবাজারে কমবেশি পর্যটকদের চাপ থাকে। আর এ চাপের কথা মাথায় রেখেই এবারের ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারের রাস্তাঘাটে এবং পর্যটন স্পটসমূহে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হবে। এছাড়া শহরের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সৈকতে গ্রহণ করা হবে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ইন্টারকম ও ইমার্জেন্সি বাটন স্থাপন করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। যার মাধ্যমে পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে তৎক্ষণিক আমাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা দায়িত্ব পালন করবেন। দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পর্যটন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতও সক্রিয় করা হবে।

ট্যুর অপারেটররা জানান, এবারের ঈদের ছুটিতে পর্যটকেরা কক্সবাজার শহরের সমুদ্র সৈকত, বার্মিজ মার্কেট, শুটকীপল্লী, শহরতলীর দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও জাহাজে এবং স্পিডবোটে সোনাদিয়া দ্বীপে ভ্রমণে যেতে পারেন। আর কেউ কেউ ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামু বৌদ্ধ মন্দির ও মহেশখালী আদিনাথ মন্দির পরিদর্শনে যাবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধউখিয়া থেকে অপহৃত ছাত্রী নগরীর লালখান বাজারে উদ্ধার, অপহরণকারী গ্রেপ্তার