জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে না থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়ার ব্যাখ্যায় এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, এটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি তার নীরব প্রতিবাদ। দলের কাউকে না জানিয়ে কক্সবাজারে যাওয়ায় হাসনাতসহ পাঁচ নেতাকে শোকজ করেছিল এনসিপি। সেই নোটিসের উত্তরে তিনি এমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
তিনি লিখেছেন, আমি এবং অনেকেই ব্যথিত হই, যখন দেখি যে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় সেই মানুষদের কথা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে, যারা অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। শহীদ পরিবার, আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই মতামত প্রদানের সুযোগ পাননি, এমনকি অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও পাননি। পাশাপাশি তাদের অবকাশ যাপন নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য এবং তার বিপরীতে দলের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করেছেন হাসনাত। তার অভিযোগ, যে কারণ দর্শাও নোটিস তাকে দেওয়া হয়েছে, সেটা বিধিবহির্ভূত এবং তা কার্যত মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে উসকে দিয়েছে। হাসনাত নোটিসের জবাব দলীয় ফোরামে জমা দেওয়ার পাশাপাশি নিজের ফেসবুকেও প্রকাশ করেছেন। শুরুতেই ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে হাসনাত লিখেছেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে মানুষ জীবন দিয়েছিল নতুন বাংলাদেশের জন্য। এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের আশায়, যেখানে কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না এবং প্রতিটি নাগরিক মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যেই এই সরকার গঠিত হয়েছিল। সরকারের উচিত ছিল এমন একটি ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা, যা সেই মানুষগুলোর আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিধিত্ব করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশাহত হওয়ার কথা জানিয়ে এই এনসিপি নেতা বলেন, ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়ায় এমন কিছু উপাদান দেখি, যা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন, ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে সংবিধান সংস্কারের জন্য জনগণ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর দায়িত্ব অর্পণের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। এই দাবিটি অসত্য এবং সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনার পথে একটি বড় অন্তরায়। আমরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছি গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা রাষ্ট্রের কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনবে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে কঙবাজার চলে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে হাসনাত বলেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারি যে আমাদের আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেক ভাইবোনকে এই অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা আমার কাছে শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজনকে, শহীদ এবং আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা এবং মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে উপস্থিত থাকার কোনও ইচ্ছা বা প্রয়োজন আমি বোধ করিনি।
তিনি বলছেন, পরদিন ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। উদ্দেশ্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা করা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করা। একইসাথে এটি ছিল একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।
কক্সবাজারে রাতের বৃষ্টিতে ভিজলেন হাসনাত : কক্সবাজারে আসা এনসিপির পাঁচ শীর্ষ নেতাকে ঘিরে নানা আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে রাতের বৃষ্টিতে ঘুরেফিরে সমুদ্র সৈকতে ফুটবল খেলেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। বুধবার রাতে কঙবাজারে ছিল ঝুম বৃষ্টি। তার মধ্যে দলীয় স্থানীয় নেতাকর্মীদের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে হোটেল–মোটেল রোডে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে। সেখান থেকে তারা নামেন সৈকতের বালিয়াড়িতে। একদল যুবক মিলে সেখানে ফুটবল খেলেছেন। এ সময় হাসনাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে সংগঠনের যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সুজা উদ্দিন ও স্থানীয় সংগঠক খালিদ বিন ওয়ালিদ উপস্থিত ছিলেন।