কক্সবাজারের নাজিরারটেক শুটকি মহালে প্রতি বছর উৎপাদন হয় কয়েকশ কোটি টাকার শুটকি। এসব শুটকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। প্রতি বছর ৯ মাস এই মহালে শুটকি উৎপাদন হয়। কিন্তু চলতি বছর পরিস্থিতি ভিন্ন হয়ে গেছে। সাগরে মাছের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞার সময় পিছিয়ে আনায় এবার এক মাসে আগেই আগামীকাল ১৫ এপ্রিল শেষ হয়ে যাচ্ছে শুটকি উৎপাদন। নিষেধাজ্ঞার ফলে নাজিরারটেক মহাল ছাড়াও জেলার অন্যান্য মহালেও বন্ধ হবে শুটকি উৎপাদন। এতে অন্তত শত কোটি টাকার শুটকি উৎপাদন কম হবে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান জানান, ভারত সরকার প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত তাদের সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ সময় ও পরের সময় বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশি জেলের ছদ্মবেশে মাছ ধরে নিয়ে যান। তাই ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই সময়সীমা পিছিয়ে এখন থেকে ভারতের সঙ্গে মিল রেখে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, কক্সবাজারের সামুদ্রিক শুটকি মাছের মৌসুম শেষের দিকে হলেও পুরো এক মাস হাতে রয়েছে। কিন্তু সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবর্তন হওয়ায় এবার শুটকি উৎপাদন মৌসুম শেষ হচ্ছে এক মাস আগেই। প্রতি বছর ৯ মাস শুটকি উৎপাদন করা গেলেও এবার থেকে আগামীতে সেই সময় কমিয়ে আট মাস করা হয়েছে।
মৎস্য অধিপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, গত আট মাসে দেশের বৃহত্তম নাজিরারটেক শুটকি মহালে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি শুটকি উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সোনাদিয়া, সেন্টমার্টিন, টেকনাফসহ অন্যান্য এলাকা মিলে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার বেশি শুটকি উৎপাদন হয়েছে।
নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির সাবেক সভাপতি আতিকুল্লাহ কোম্পানি জানান, প্রতি বছর ভাদ্র থেকে বৈশাখ পর্যন্ত ৯ মাস শুটকি উৎপাদন হয়। দীর্ঘকাল ধরে এই নিয়ম চালু রয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুম থেকে এক মাস আগেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার উৎপাদন কমে যাবে। পুরো সময় পেলে শুটকির উৎপাদন দাঁড়াত কমপক্ষে ৬০০ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, নাজিরারটেক এলাকার অন্তত ৪০০ একর বালুচরে বসে শুটকি মৌসুমের মহাযজ্ঞ। এখানে রয়েছে প্রায় ৬০০টি শুটকি শুকানোর মাচা (মহাল)। এছাড়া কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সোনাদিয়া, সেন্টমার্টিন, টেকনাফসহ অন্যান্য এলাকায় আরো দুই শতাধিকসহ আট শতাধিক মাচায় দৈনিক কমপক্ষে ১৬০ টন শুটকি উৎপন্ন হয়। এবার এক মাস সময় কম হওয়ায় উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির তথ্য মতে, কক্সবাজার পৌরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮টি গ্রামের মানুষ বেশিরভাগ নাজিরারটেক শুটকি মহালের সঙ্গে জড়িত। সংখ্যায় কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ। এসবের মধ্যে ৩০ হাজার নারী শ্রমিকসহ রয়েছে কমপক্ষে ৪০ হাজার শ্রমিক। কক্সবাজার উপকূলের কয়েক হাজার ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে জেলেরা সাগরে মাছ ধরেন। এই শুটকি মহাল থেকে সারা দেশে প্রতি সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক করে সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি ট্রাকে থাকে ১২–১৩ টন করে শুটকি।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে শুটকি উৎপন্নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১–২২ অর্থবছরে শুটকি উৎপাদন হয়েছিল ৩১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। এক মাস সময় কমলেও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবারও ৩৮–৪০ হাজার মেট্রিক টন শুটকি উৎপন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।