কক্সবাজারে মা-মেয়ে খুনের নেপথ্যে কী

শাহ আমানত সেতু এলাকায় স্বামী গ্রেপ্তার, জবানবন্দি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ

আট মাস বয়সী শিশু সন্তান অনামিকার পিতৃত্ব নিয়ে সন্দেহ ছিল স্বামী জেমিন বিশ্বাসের। এজন্য কক্সবাজার হোটেলে নিয়ে গিয়ে স্ত্রী সোমা দে ও আট মাসের কন্যা সন্তানকে তিনি নিজেই হত্যা করেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে জেমিন বলছেন, আট মাসের সন্তানকে স্ত্রী সোমা হত্যা করেছেএ সন্দেহের বশে স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করেন তিনি। কক্সবাজার শহরের আবাসিক হোটেলে স্ত্রী ও কন্যাশিশু হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে এ তথ্য জানান

 

জেমিন। তবে শুক্রবার মধ্যরাতে বাকলিয়া থানাধীন শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন এলাকায় মারচা পরিবহন সার্ভিসের কাউন্টারের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন বাকলিয়া থানার ওসি আব্দুর রহিম। তিনি জানান, জেমিন বিশ্বাস কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে এসে শাহ আমানত সেতু এলাকায় অবস্থান করছে তথ্য পেয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেমিন পুলিশকে জানান, জেমিন ও সোমা দম্পতি তিন সন্তানকে নিয়ে মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার বেড়াতে এসে সাগরপাড়ের আবাসিক হোটেল সি আলিফে উঠেন। সোমা আগে থেকেই রক্তচাপজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরও তিনি অসুস্থবোধ করলে তাকে শুয়ে থাকতে পরামর্শ দেন। পরে জেমিন প্রথম ও সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে নাস্তা আনতে হোটেল থেকে বের হন। এর

 

কিছুক্ষণ পর হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে দুই সন্তানকে রেখে স্ত্রীকে দেখার কথা বলে হোটেল কক্ষে যান। জেমিন হোটেল কক্ষে ফিরে স্নানকক্ষের বালতির পানিতে ছোট মেয়েকে মৃত অবস্থায় এবং স্ত্রীকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় রাগের মাথায় জেমিন তার স্ত্রীকে কাঁধে ঘুষি মারেন এবং পরে গলা টিপে হত্যা করেন।

ওসি আরও জানান, ঘটনার পর জেমিন দুই সন্তানকে নিয়ে বাঁশখালী ফিরে আসে। সেখানে জনৈক আত্মীয়ের বাড়িতে সন্তানদের রেখে শুক্রবার রাতে আত্মগোপনের উদ্দেশে চট্টগ্রাম চলে আসে। তবে পুলিশ তার এসব কথা বিশ্বাস করছে না। ওসি বলেন, জেমিন তার স্ত্রীকে সন্দেহ করত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে

পারিবারিক কলহ ছিল, অশান্তি ছিল। এছাড়া আট মাস বয়সী ছোট মেয়ের পিতৃত্ব নিয়েও সন্দেহ ছিল তার। এ কারণে তিনি স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জেমিন বিশ্বাস (৪০) বাঁশখালী উপজেলার বাণীগ্রামের দুলাল বিশ্বাসের ছেলে। ২০০৯ সালে পারিবারিকভাবে উপজেলার নাথপুরা এলাকার শচীন্দ্র দেবের মেয়ে সোমা দে কে (৩৬) বিয়ে করেন। তাদের তিন মেয়েদীপান্বিতা বিশ্বাস (১১), জিতু বিশ্বাস () এবং অনামিকা (আট মাস)। জেমিন আগে চট্টগ্রামের

আজিম গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তিন মাস আগে তিনি ওমানে চলে যান। কিন্তু ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার আবার বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যেই জেমিন ও সোমা দম্পতি তিন সন্তানকে নিয়ে মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার বেড়াতে এসে সাগরপাড়ের আবাসিক হোটেল সি আলিফে উঠেন। শুক্রবার সেখান থেকেই মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।

হোটেলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে জেমিন বিশ্বাস তার দুই মেয়েকে নিয়ে ৪১১নং কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। দুই মেয়েকে হোটেলের লবিতে রেখে সাড়ে ১০টার দিকে তিনি আবার ঘরে ফিরে আসেন। সাতআট মিনিট পর তিনি একটা তোয়ালে নিয়ে কক্ষ

থেকে বের হন এবং দুই মেয়েকে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে যান। এরপর তিনি আর হোটেলে ফিরে আসেননি। দুপুর ১২টায় তাদের হোটেল থেকে চেক আউট করার কথা ছিল। এ ব্যাপারে জেমিন বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে চেক আউট করতে

হোটেলের এক কর্মচারী গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ। সাড়ে ১২টার দিকে কক্ষের মাস্টার চাবি দিয়ে দরজা খুলে মেঝেতে সোমা দে ও বিছানায় কন্যাসন্তানের মৃতদেহ দেখতে পায় এবং পুলিশকে খবর দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাতে আবার অস্থিরতার শঙ্কা
পরবর্তী নিবন্ধহোটেল কক্ষে তরুণী খুনে ইয়াবা কারবারি