আসছে শীত মৌসুমকে টার্গেট করে সাগরপথে মানবপাচারের জন্য সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী নেটওয়ার্ক। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূলকে ব্যবহার করে কয়েক লক্ষ মানুষকে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সমুদ্রপথে অবৈধভাবে বিদেশে পাচারকালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিজিবি ও কোস্টগার্ডের হাতে ৫২৬ জন নারী–পুরুষ ও শিশু উদ্ধার হয়েছে। কক্সবাজার থেকে মানবপাচারকারী চক্রের নেটওয়ার্ক নির্মূলে অন্য ৭টি বিভাগীয় শহরের মতোই এখানে একটি মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল রোববার সকালে কক্সবাজারে আয়োজিত মানবপাচার প্রতিরোধ বিষয়ক এক কর্মশালায় আলোচকরা বলেন, মানবপাচারের জন্য দেশের একটি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা কক্সবাজার। কক্সবাজারে রয়েছে বিশাল সমুদ্র উপকূল। এখানে অবস্থান করছে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১০ লক্ষাধিক মিয়ানমার নাগরিক। অতীতেও কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরকে মানবপাচারের রুট হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আসছে শীত মৌসুমেও বঙ্গোপসাগরকে আবারো ব্যবহারের চেষ্টা করতে পারে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারীচক্র। তাই এই চক্রের সদস্যদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে কক্সবাজারে একটি আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
আলোচকরা বলেন, বর্তমানে দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরেই মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। কক্সবাজারের মানবপাচার মামলাগুলোর বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। কিন্তু ওই আদালতে রয়েছে এখন ১৪ হাজারের বেশি বিচারাধীন মামলা। ফলে মানবপাচার মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে পারে মানব পাচারকারীরা। ‘রাইটস যশোর’ আয়োজিত ওই কর্মশালায় আলোচকরা মানবপাচারের মাধ্যমে বিলুপ্ত দাসপ্রথাকে ফিরিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা বলেও মন্তব্য করেন। জোরপূর্বক শ্রম লুট, যৌনদাসত্ব ও অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ কেটে নেয়ার জন্যই মানবপাচার করা হয় বলে জানান আলোচকরা। মানবপাচার প্রতিরোধ বিষয়ক সংগঠন ‘রাইটস যশোর’ এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের সভাপতিত্বে ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এডভোকেট তাহমিদ আকাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় আলোচনায় আরো অংশ নেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের এসিস্ট্যান্ট প্রটেকশন অফিসার মিনহাজুল ইসলাম, রাইটইস যশোরের প্রোগাম ম্যানেজার রাফিউল হাসান প্রমুখ। কর্মশালায় কক্সবাজার জেলা শহরের ২০ জন সাংবাদিক ছাড়াও মানবপাচার প্রতিরোধ বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।