কক্সবাজারে বিচ কার্নিভাল উদ্বোধন সৈকত জুড়ে সাজ সাজ রব

আহমদ গিয়াস ও সুনীল বড়ুয়া | বৃহস্পতিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল। ‘পর্যটনে পরিবেশ বান্ধব বিনিয়োগ’প্রতিপাদ্যে বর্ণিল শোভাযাত্রাসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। গতকাল বুধবার সকালে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করেন অতিথিরা। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এ পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যাল।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফা। এছাড়াও সংসদ সদস্য জাফর আলম, কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান, টুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান, পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান, সাংবাদিক আবু তাহের, মুজিবুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, কক্সবাজার বাংলাদেশের পর্যটনকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। পর্যটন দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের আয়োজন কক্সবাজারকে বর্ণিল রূপ দিয়েছে। আশা করছি এ আয়োজনের মধ্যদিয়ে পর্যটন শিল্প বিশ্বব্যাপী প্রসার লাভ করবে। অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, কক্সবাজারকে বলা হয় পর্যটন রাজধানী। এখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেললাইনসহ অনেক মেগাপ্রকল্প হচ্ছে। কক্সবাজার এগিয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজারকে নিয়ে সবাই গর্ব করি। আমাদের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক।

বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে এবং এখানকার পর্যটন শিল্পের প্রসারে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। তিনি বলেন, নানা বৈচিত্রে ভরা এ উৎসবের বর্ণিল রূপ পর্যটকদের মোহিত করছে। কক্সবাজার ভ্রমণে এসে তারা ভিন্ন মাত্রার বিনোদনে মোহিত হচ্ছে। আমরা আশা করছি এটি অবশ্যই কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যালকে ঘিরে কক্সবাজার শহরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। মেলার মঞ্চ ও দুই শতাধিক স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। হোটেলমোটেল, রেস্তোরাঁ ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যটক বরণে নিয়েছে নানা প্রস্তুতি। সব প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে ‘বিশেষ ছাড়’ দেওয়ার ঘোষণা।

পর্যটন মেলার আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন জানিয়েছেন, পর্যটন মৌসুমকে বরণে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সব হোটেলমোটেল ও গেস্ট হাউসে ৬০% ছাড় দেওয়া হবে। একই সঙ্গে খাবারের রেস্তোরাঁয় ১৫%, সব বাস ভাড়ায় ২০%, হেলিকপ্টার জয় রাইডে ১০%, টায়ার টিউব ভাড়ায় ৩০%, কিটকট (ছাতাচেয়ার) ভাড়ায় ৩৩%, ফটোগ্রাফারদের মাধ্যমে ছবি তোলা প্রতি কপি দুই টাকা, প্যারাসেইলিং রাইডে ৩০%, জেটস্কি ও বিচ বাইক রাইডে ৩৩%, লকার ভাড়ায় ৫০%, গাড়ি পার্কিংয়ে ৫০%, ফান গেমে ৫০% সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১৫টি খাতে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিনামূল্যে সার্কাস শো’র ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সাতদিনের মেলায় সমুদ্রের উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিন সার্কাস প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবলসহ নানা আয়োজন থাকবে। পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বিনোদনে স্থানীয় শিল্পীর পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কুষ্টিয়া লালন একাডেমি ও সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার শিল্পীরা। এছাড়াও সুনামগঞ্জ থেকে আসা শিল্পীরা পরিবেশন করবেন হাসন রাজার গানসহ আঞ্চলিক ভাষায় নানা গান। ময়মনসিংহ থেকে মহুয়াপালা, কুড়িগ্রাম থেকে ভাওইয়া গানের শিল্পীরাও আসবেন। বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি থেকে আসবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দল। চট্টগ্রাম থেকে আঞ্চলিক গানের খ্যাতিমান শিল্পী প্রেম সুন্দর ছাড়াও আসবেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা। একেক দিন মঞ্চে গাইবেন লিজা, ঐশী, তানজির তুহিন, রবি চৌধুরী, নিশিতা বড়ুয়াসহ আরও অনেক জাতীয় শিল্পী।

অপরদিকে আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। আগামীকাল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের সমাগম হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যাল এবং তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে ব্যাপক পর্যটক সমাগম হবে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয়
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা