কক্সবাজারে বাণিজ্য খাতে ২৫০ কোটি টাকার ক্ষতি

কোটা আন্দোলন । এক সপ্তাহে টেকনাফ স্থলবন্দরে কমেছে পণ্য আমদানি-রপ্তানি

এম এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার | শনিবার , ২৭ জুলাই, ২০২৪ at ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘটিত ঘটনায় কক্সবাজারে ব্যবসাবাণিজ্য খাতে গত এক সপ্তাহে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জরিপে ক্ষয়ক্ষতির এই পরিমাণ নিরূপণ করা হয়। আন্দোলনকারীদের শাটডাউন কর্মসূচি শেষ হলেও এখন আবার সরকার ঘোষিত কারফিউ চলমান থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, মৎস্য, পর্যটন, শিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও বাসমিনিবাসসহ কক্সবাজারে নানা ধরনের ব্যবসার খাত রয়েছে। কোটা আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিবেশে বন্ধ ছিল ইন্টারনেট। কক্সবাজার থেকে চলাচল করেনি দূরপাল্লার কোনো বাস। বলতে গেলে জেলায় পুরো বাণিজ্যখাত গত এক সপ্তাহ মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এতে বাণিজ্য খাতে প্রায় ২৫০ কোটির ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি পুষিয়ে আনতে ব্যবসায়ীদের অনেকদিন সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনো উন্নতি হয়নি। ইতোমধ্যে পর্যটন খাতে অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। পণ্য পরিবহনে পুরোপুরি স্বাভাবিকতা ফিরেনি। তাই এই সংকট দ্রুত নিরসন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুবা জেলার অর্থনীতির চাকা আরও বেহাল হয়ে যাবে।

এদিকে কারফিউ শিথিল করা হলেও কক্সবাজার ছাড়ছে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা। ইতোমধ্যে প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কক্সবাজার ছেড়েছে তিন হাজার পর্যটক। সব মিলিয়ে গত কয়েকদিনে প্রায় ২০ হাজার মানুষ কক্সবাজার ছেড়ে গেছে। যার ফলে পর্যটনে আবারও অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝে ভর করেছে দুশ্চিন্তা।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারে ২২টি বড় হোটেল, ২০০টি মাঝারি হোটেল মোটেল, ৩০০টি কটেজরিসোর্ট ও ৩০০টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। বর্তমানে পর্যটক না থাকায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবাই অবসর সময় পার করছে। এ সংকট দূর না হলে আমরা পথে বসে যাব। পর্যটন খাতে প্রতিদিন ৫ কোটি টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে। এই সংকট উত্তরণে সময় লেগে যায় অনেক। আয় না হলেও আমাদের কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ নানা খরচ কিন্তু কমে না। তাই আশা করছি সরকার পর্যটন খাত বাঁচাতে এগিয়ে আসবে।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, শুধুমাত্র আবাসিক হোটেলের রেস্তোরাঁগুলো আমাদের খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য আমরা খাবারে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। তবুও পর্যটকেরা থাকছেন না। এতে প্রতিদিন আমরা লোকসান গুণছি। পণ্য আমদানিরপ্তানি আগের চেয়েও কমে গেছে টেকনাফ স্থলবন্দরে। এপারে কারফিউ ও ওপারে যুদ্ধের কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে কমে গেছে রাজস্ব আয়। মিয়ানমারে যুদ্ধ চললেও বিগত ৭৮ দিন আগে টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে হিমায়িত মাছ রুই, কাতাল, শুটকি মাছ, বিভিন্ন প্রকার কাঠ, বরই আচার, শুকনা বরই, টক তেতুল ও প্লাস্টিক। পাশাপাশি রপ্তানি হয়েছে সিমেন্ট, গেঞ্জি, গেঞ্জির কাপড়, দেশীয় কাপড়, প্লাস্টিক পাইপ, মানুষের চুল, এ্যালুমিনিয়াম প্রোডাক্টস, হাঙ্গর মাছ ও চামড়া প্রভৃতি। কিন্তু দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিবেশে নিম্নমুখী বন্দরের আমদানিরপ্তানির সূচক।

টেকনাফ স্থল বন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট ব্যবস্থাপক মেজর (অব.) সৈয়দ এ কাউছার বলেন, কারফিউতে পণ্য পরিবহনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধের কারণে সেদেশের অনেক ব্যবসায়ী পণ্য পাঠাচ্ছে না। এখানকার ব্যবসায়ীরাও সব পণ্য পাঠাতে পারছে না। যার ফলে কমেছে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি। কিন্তু বন্ধ হয়নি পুরোপুরি। তবে আগের চেয়ে রাজস্ব আদায় অনেক কমে গেছে। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোদমে স্বাভাবিক হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহ্রদে ঘেরা রাঙামাটিতে নেই সাঁতার শেখানোর কোনো আয়োজন!
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় ১৯৫০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্য