কক্সবাজারে ফের লবণ উৎপাদন শুরু

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৯ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে বৃষ্টির কারণে ব্যাহত লবণ উৎপাদন গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে। রোববার রাতে জেলাব্যাপী এক পশলা বৃষ্টিপাত হলেও পরদিন সোমবার সকাল থেকে রৌদ্রকোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকায় চাষীরা আবারো মাঠ প্রস্তুত করে সেখানে লবণ পানি তুলেন। গত ৩-৪ দিনের তীব্র সূর্যের তাপে মাঠের সেই পানি শুকিয়ে লবণে পরিণত হচ্ছে।
বিসিকের হিসাব মতে, কক্সবাজারে চলতি মৌসুমে প্রায় ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর জমিতে লবণের চাষ হচ্ছে। পিক সিজন বা ভর মৌসুমে এসব জমি থেকে প্রতি সপ্তাহে দেড় লাখ থেকে পৌনে ২ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়ে থাকে। গত সপ্তাহেও (২ এপ্রিল পর্যন্ত) এক লাখ ৫৭ হাজার মে.টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হলেও তা লক্ষাধিক মে. টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কক্সবাজারের বিসিক কর্মকর্তারা।
কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের পরিদর্শক ইদ্রিস আলী জানান, দেশের ৯০ শতাংশ লবণই কক্সবাজারে উৎপাদিত হয়। কক্সবাজার জেলার রামু ছাড়া বাকী সাত উপজেলা যথাক্রমে সদর, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় নিম্নভূমিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে লবণের চাষ হয়ে থাকে। সাধারণত: ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সময়কে লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হলেও আবহাওয়ার কারণে সময়ের পরিধি বাড়ে কমে। আবহাওয়া ভাল থাকায় গতবছর মৌসুমের অতিরিক্ত আরো ১০ দিন বেশি লবণ উৎপাদিত হয়েছে। কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপমহাব্যবস্থাপক ইকবাল কবীর ভূইয়া বলেন, চলতি বছর লবণের চাহিদা এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২২ লাখ ১৭ মেট্রিক টন। তবে গত ২ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৯ লাখ ২৩ হাজার ৮৯৯ মেট্রিক টন অপরিশোধিত লবণ। মৌসুমের বাকী আছে আর মাত্র ছয় সপ্তাহ। তবে এই সময়েও উপযুক্ত আবহাওয়া থাকলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
চাষীরাও আশা করছেন, অনুকূল আবহাওয়া পাওয়া গেলে এ বছর লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব। তবে মাঠে লবণের দাম কম থাকায় এখনও বেশ কিছু জমি খালি পড়ে আছে বলে জানান মহেশখালীর লবণ চাষী মহিবউল্লাহ। একই কথা জানান টেকনাফের সাবরাংয়ের লবণ চাষী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়ার। তবে সরকারের প্রণোদনা বা উৎসাহ পেলে চাষীরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়বেন বলে মনে করেন চকরিয়া উপজেলা লবণ চাষী ঐক্য পরিষদ সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি এডভোকেট মো. শহীদউল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রতিমণ লবণ উৎপাদনে খরচ হয় ২শ টাকার বেশি। আর এখন মাঠে লবণের দাম দেড়শ টাকারও কম। সোডিয়াম সালফেট বা কারখানার শিল্প লবণের নামে দেশে ভোজ্য লবণ আমদানী করে লবণ চাষীদের পথে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ শিল্পমন্ত্রী দেশে লবণ আমদানী না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। লবণ চাষী ও আওয়ামীলীগ নেতা শফিক মিয়া বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে লবণ আমদানি বন্ধ থাকলেও কিছু অসাধু আমদানিকারক ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্টের নামে ভোজ্য লবণ আমদানি করছে। এ কারণে দেশের বাজার বিদেশি লবণে সয়লাব হয়ে গেছে। বিসিকের মতে, কক্সবাজারের মাঠে এখন প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক লবণ মজুদ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মিলেও সমপরিমাণ লবণ মজুদ আছে। তাই দেশে এ বছর লবণ ঘাটতির কোন সম্ভাবনা নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশের মেয়েরা
পরবর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারকে চাপ দিন, ডি-৮ নেতাদের প্রধানমন্ত্রী