পর্যটন মৌসুম ঘিরে কক্সবাজারে মাথাচাড়া দিয়েছে ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীরা। পর্যটন জোন কলাতলী, সমুদ্র সৈকত এবং শহরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পেশাদার ছিনতাইকারীরা। একইসাথে প্রতারক চক্র ও চোর চক্রের সদস্যরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব অপরাধীদের হাতে পর্যটক ও স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত ছিনতাই ও আঘাতের শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ গত রোববার কলাতলীর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এলাকায় এক পর্যটককে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করে তার সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় একদল ছিনতাইকারী। একইভাবে গতকাল সোমবারও একই স্থানে এক হোটেল কর্মচারীকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে।
তবে পুলিশ বলছে, ছিনতাইকারীসহ অপরাধীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান ও নজরদারি করছে থানা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। এর অংশ হিসেবে গত এক মাসে অন্তত অর্ধশতাধিক চিহ্নিত অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ রোববার পর্যটককে ছুরিকাঘাত করে সর্বস্ব লুটের ঘটনায় ছয় ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্থানীয় লোকজন, পর্যটক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরজুড়ে পেশাদার ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীরা সক্রিয় রয়েছে। তারা সুযোগ বুঝে কৌশলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাধারণ মানুষকে রক্তাক্ত আঘাত ও সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে। প্রতিনিয়ত এমন ঘটলেও পর্যটন মৌসুম ঘিরে সমপ্রতি সময়ে অপরাধীদের তৎপরতা বেড়েছে। এসব অপরাধীদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকরা কেউ! গত দুই মাসে এমন কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা শহরজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে!
জানা গেছে, সর্বশেষ কক্সবাজারে বেড়াতে এসে গত রোববার সন্ধ্যার আগে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন সাইফুল ইসলাম (২২) নামের এক পর্যটক। তাকে ছুরিকাঘাত করে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। সাইফুল্লাহ টাঙ্গাইলের বাসাইলের নাহালি এলাকার সিদ্দিক সিকদারের ছেলে। এই ঘটনার ব্যাপারে ভুক্তভোগী পর্যটক সাইফুল জানান, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি সিএনজিতে থাকা কয়েকজন যুবক তাকে ধরে ফেলে। একজন তাকে ডেকে বাড়ি কোথায়সহ নানা ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন। একপর্যায়ে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের একজন এসে তাকে পেছন থেকে গলা চেপে ধরে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইলিয়াছ খান জানান, ঘটনাটির খবর পেলে তৎক্ষণিকভাবে সদর মডেল থানা পুলিশের একটি দল সদরের একাধিক স্থানে অভিযান চালায়। অভিযানে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিনতাই চক্রের পেশাদার পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১০টি মোবাইল ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।
গ্রেপ্তাররা হলো, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার দক্ষিণ ডিককুলের দুদু মিয়ার ছেলে মো. বাবুল(২৮), পৌরসভার পিটিস্কুল চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকার মুহাম্মদ সেলিমের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২১), নতুন বাহারছরা কানাইয়া বাজার এলাকার ফজল করিমের ছেলে মো. সোহেল (২২), কলাতলীর কালাপুতুর ছেলে মো. সিদ্দিক ওরফে কানাইয়া (৪০) এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ডেইড্ডি ভুতপারার সরওয়ারের ছেলে বর্তমানে শহরের টেকপাড়া চৌমুহনীর বাসিন্দা ইমরান সরোয়ার ইমন (২৫)। রোববার রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার পাঁচজনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানান ওসি। অন্যদিকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায়ও পুলিশকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে এক হোটেল কর্মচারীকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ও টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। আহত যুবককে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আহমেদ পেয়ার বলেন, ‘শহর কেন্দ্রিক বহু ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। পুলিশের কঠোর নজরদারির মধ্যেও তারা সুযোগ বুঝে অতিকৌশলে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অপরাধ ঘটাচ্ছে। কিন্তু পুলিশও বসে নেই। প্রতিনিয়ত সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পেশাদার ছিনতাকারীসহ নানা ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতার করছে।’ ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘সমুদ্র সৈকত, কলাতলী এবং অন্যান্য পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট নিচ্ছিদ্রভাবে নিয়োজিত রয়েছে। অপরাধ সংঘটিত করে কোনো অপরাধী পার পাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ট্যুরিস্ট পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে।’