টানা ৩ দিনের সরকারি ছুটিতে দেশের প্রধান অবকাশ যাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে এখন পর্যটকদের বাঁধভাঙা জোয়ার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো যানবাহনের স্রোত এখন সাগরপাড়মুখী। আর এসব যানবাহনের ভিড়ে শহর ও শহরতলীতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম। দেখা দিচ্ছে অচলাবস্থা। হোটেল মালিকরা বলছেন, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি সোমবার পর্যন্ত হোটেল-মোটেলের সকল কক্ষ আগাম বুকড।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, এবারের সাপ্তাহিক ছুটির সাথে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটি যুক্ত হওয়ায় ৩ দিনের বন্ধে শুক্রবার কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক ছুটে এসেছেন। পর্যটকদের ভিড়ে কক্সবাজার শহরের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউসের প্রায় সকল কক্ষ এখন হাউসফুল। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজারে প্রায় দেড়লাখ পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। আর শহরের বাইরে আরো ২০/২৫ হাজার পর্যটকের থাকার সুবিধা রয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের ভিড়ে সর্বত্র টইটুম্বর অবস্থা।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজার শহরের মতোই অবস্থা টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনেও। রেস্তোরাঁ ও দোকানপাটেও এখন ক্রেতাদের তীব্র ভিড়। ফলে ক্রেতাদের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে অধিকাংশ দোকানপাটই গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে। আর সাগরপাড়ের দোকানগুলো খোলা থাকছে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা। শহরের কলাতলী সড়ক ও সমুদ্র সৈকতের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পর্যটকদের আনাগোনায় দিনরাত এখন একাকার। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টোয়াক বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া জানান, টানা ৩ দিনের সরকারি ছুটিতে শুক্রবার থেকে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। একইভাবে শহরের বাইরে ইনানী, হিমছড়ি, সেন্টমার্টিন, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, সোনাদিয়া, আদিনাথসহ জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও বিভিন্ন বয়সী মানুষের তীব্র ভিড় দেখা যায়। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজগুলোও উপচে পড়া যাত্রী নিয়ে এখন চলাচল করছে।
এমনই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকাল থেকেই দীর্ঘ যানজটে শহর ও শহরতলীতে প্রায় অচলাবস্থা দেখা দিচ্ছে এবং মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে হাজারো মানুষকে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে বলে জানান শহরের বাসিন্দা মাঈনুদ্দিন হাসান শাহেদ। তিনি বলেন, শহর ও শহরতলীতে ৩ মিনিটের রাস্তা পার হতে এখন ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগছে।
আগামী সোমবার পর্যন্ত এই চাপ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন সৈকতের ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার লাবণী সৈকতের ব্যবসায়ী বকুল মনে করেন, শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত কক্সবাজারে দৈনিক দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করবেন। পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়েই দৈনিক লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করবেন।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, দুই বছর আগে একুশের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা হাজার হাজার পর্যটক হোটেলে কোনো কক্ষ খালি না পেয়ে সমুদ্র সৈকতের চেয়ারে কিংবা রাস্তার ধারে বসে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটায়। পরে স্থানীয় কিছু মহৎ ব্যক্তি কয়েক শত পর্যটককে নিজ নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন। একই চাপ এবারের বন্ধেও পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন তারা।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, লাখো পর্যটকের আনাগোনা থাকায় কক্সবাজার শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতে চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশি নজরদারি রয়েছে। এছাড়া মেরিন ড্রাইভসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতেও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্টির কারণেই কক্সবাজারে পর্যটকদের এমন ঢল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক সাগর, কবীর, সুমন ও কাকলী জানান, শীতের শেষ দিকে সপরিবারে ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। করোনা সতর্কতায় গত প্রায় এক বছর ধরে তাদের জীবনে যেন নাভিঃশ্বাস ওঠেছিল। শুক্রবার সকালে কক্সবাজারে বেড়াতে এসে বঙ্গোপাসাগরের পানিতে জলখেলায় মেতে, বিস্তীর্ণ সৈকতে সাগরের ঢেউয়ের পাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করে জীবনে নতুন উদ্দীপনা পেয়েছেন।
একই কথা জানান কুষ্টিয়ায় ঈষিতা-ইকবাল ও পাবনার ফারুক-বাবলী দম্পত্তি। চাকরিজীবী এই পরিবারের মতোই দল বেঁধে আরো হাজারো পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে। আর নানা বয়সী ও বর্ণের এসব পর্যটকের আনাগোনায় তীব্র ভিড়-যানজটের মাঝেও বিরাজ করছে এক অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য, আনন্দের জোয়ার!