টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধস ও ঢলে ভেসে গিয়ে কক্সবাজারে নিভে গেছে ১৩ প্রাণ। এরমধ্যে টেকনাফে একই পরিবারের ৫ জন ও মহেশখালীতে মারা গেছেন ২ জন। এছাড়া উখিয়া ও ঈদগাঁওতে পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে নিহত হয়েছেন আরো ৬ জন।
টেকনাফে নিহতরা হলেন ছৈয়দ আলমের ৩ ছেলে আব্দু শুক্কুর (২০), মো. জোবায়ের (১৩), আব্দুল লতিফ (৮) ও ২ মেয়ে কোহিনূর আক্তার (১৪) এবং জায়নুরা (১২)। এসময় ঘরের অন্য পাশে থাকায় সামান্য আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান সৈয়দ আলম ও রেহেনা বেগম দম্পতি। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য হোছেন আহমেদ জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে পাহাড়ের কিছু অংশ ভেঙ্গে বাড়ির উপর পড়ে সৈয়দ আলমের পরিবারের ৫ জন সদস্য ঘটনাস্থলে মারা যান। টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থেেল গিয়ে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করেছে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান।
মহেশখালীতে বুধবার ভোররাতে পৃথক পাহাড় ধসে দেয়াল চাপা পড়ার ঘটনায় শতবর্ষী এক বৃদ্ধ ও কিশোরীসহ দুইজন নিহত ও ৭ জন আহত হয়েছেন। পাহাড়ের মাটি চাপা পড়ে মারা পড়ে গৃহপালিত পশুও। গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার ভোর রাতের দিকে উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজুয়ার ঘোনা গ্রামে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এসময় তাহাজ্জুদ নামাজরত অবস্থায় দেয়াল চাপায় নিহত হন বৃদ্ধ আলী মিয়া। একই ঘটনায় আলী মিয়ার স্ত্রী, ছেলে ও নাতি-নাতনি সহ ৫ সদস্য এবং বাড়ি সংলগ্ন গোয়াল ঘরে থাকা গবাদি পশু মাটিচাপা পড়ে। প্রতিবেশী লোকজন দুঘণ্টা চেষ্টা করে আলী মিয়ার বৃদ্ধা স্ত্রী দিলওয়ারা বেগম (৭৫) সহ বাকিদের উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও মারা যান আলী মিয়া। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, ইউএনও মাহফুজুর রহমান, মহেশখালী থানার ওসি আব্দুল হাই, পিআইও রাশেদুল ইসলাম ও হোয়ানক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল।
অপরদিকে মঙ্গলবার ভোররাতে ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের উত্তর সিপাহীর পাড়ায় পাহাড় ধসে বাড়ির দেয়াল চাপা পড়ে নিহত হয় আনসারুল করিমের কন্যা মোরশেদা বেগম (১৭)। তাছাড়া হোয়ানক ইউনিয়নের পুঁইছড়া ও মরাঝিরি গ্রামের পাহাড়ি এলাকায় আরো পৃথক তিনটি পাহাড় ধসের ঘটনায় অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন।
ঈদগাঁওতে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার সাড়ে ৭ ঘন্টা পর ৩ যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- ঈদগাঁও ইউনিয়নের দরগাহ পাড়ার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে ওমর ফারুক (২৩) ও মোহাম্মদ মোরশেদ (১৫) এবং নিহত দুই ভাইয়ের ভাগিনা দেলোয়ার হোসেন (১৬)। নিহত দেলোয়ারের বাবা একই এলাকার বাসিন্দা নুরুল আবছার।
স্থানীয়দের বরাতে রামু ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা সৌমেন বলেন, বুধবার সকালে ঈদগাঁও দরগাহ পাড়া এলাকার স্থানীয় পাঁচ যুবক মিলে প্রবল বৃষ্টিতে জাল নিয়ে মাছ ধরতে ঈদগাঁও খালের পানিতে নামে। এসময় এদের মধ্যে দুইজন কূলে উঠতে সক্ষম হলেও বাকি তিনজন ভেসে যায়। পরে এ ঘটনা স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে রামু ফায়ার স্টেশনের একটি দল উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। বেলা দুইটা পর্যন্ত নিখোঁজ তিনজনকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তা চাওয়া হয়। পরে বিকাল ৪টায় রামু ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার দলের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ‘প্রদীপ ডুবুরি দলের’ সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে নামে এবং তাদের দীর্ঘ দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলের কিছুদূর এলাকা থেকে ৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
অন্যদিকে উখিয়ায় পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া তিনজনের মৃতদেহ গতকাল উদ্ধার করা হয়েছে। স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর নিখোঁজের একদিন পর তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তারা হল চোরাখোলা এলাকার বাসিন্দা মৃত অলি আহমদের ছেলে আব্দুর রহমান (৪৫), রাজাপালং ইউনিয়নের ধইল্যার ঘোনা এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে আকবর আলী (৩১) ও মালিয়ারকুল এলাকার মো. ইসলামের ছেলে মো. রুবেল (২২)।
তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিহতদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।