কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট সংলগ্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা অংশে সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ–বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নদী বন্দরের দখলমুক্ত জায়গার সীমানা নির্ধারণ ঘিরে পাঁচদিন ধরে চলে এই উত্তেজনা। উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনা ও জমির মালিকানা দাবি করে সীমানা নির্ধারণ কাজে বাধা দিয়ে আসছে স্থানীয়রা। এর অংশ হিসেবে প্রতিদিন তারা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রশাসনিক লোকজনের কাজে বাধা সৃষ্টি করে।
সর্বশেষ গতকাল রোববার দুপুরেও শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তরাঘাট এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পিছু হটে গতকাল রোববার অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। স্থানীয়দের দাবি, উচ্ছেদ হওয়া স্থানের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জমিও রয়েছে। এই সংক্রান্ত খাজনা আদায়সহ সর্বশেষ সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত বৈধ কাগজপত্রও রয়েছে। আন্দোলনের সমন্বয়কারী আইনজীবী মো. ইসমাইল বলেন, বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ করা জমিতে অসংখ্য মানুষের খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ৭৭ জন মামলা করেছেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাসহ সব ধরনের আইনগত ভিত্তি অগ্রাহ্য করে বিআইডব্লিউটিএ ক্ষমতার জোরে দুই দফায় আমাদের শত শত ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের নামে ‘মিথ্যা’ মামলা দায়ের করেছে। এবারও আদালতের সব আদেশ–নিষেধ অগ্রাহ্য করে কাঁটাতার দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করতে চেষ্টা করছে। এই খবর শুনে সড়কে বেরিয়ে এসে চার দিন ধরে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল সকাল ৯টা থেকে বদরমোকাম, কস্তুরাঘাট ও পেশকারপাড়ার লোকজন গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ শুরু করেন। এতে ওই এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে একই জায়গায় কয়েকশ নারী–পুরুষ মানববন্ধন করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা কস্তুরাঘাট এলাকায় পৌঁছান। এরপর উত্তেজনা আরও বাড়ে। শেষ পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণের কাজ বন্ধ করেই ফিরে যায় বিআইডব্লিউটিএ।
মানববন্ধনে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরাও অংশ নেন। এতে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাসিমা আকতার। তিনি বলেন, বাঁকখালী নদীর দখল নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পৃথক তিনটি মামলা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ নিয়েও হাইকোর্টে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না করে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে জায়গা জমিতে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা অন্যায়। আলোচনার মাধ্যমে সংকটের নিরসন না করলে পরিস্তিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
এদিকে বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর বাঁকখালী নদীর ওই অংশে উচ্ছেদ অভিযানে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে প্রায় ৬৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার জমি আবার দখলের ঝুঁকি থাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও সীমানা পিলার দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ।
কক্সবাজার নদীবন্দরের পোর্ট অফিসার মো. আবদুল ওয়াকিল বলেন, অবরোধকারীদের বড় অংশ ভাসমান লোকজন, তাদের জমির বৈধ কাগজ নেই। কিছু দখলদার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভাসমান লোকজনকে ব্যবহার করেছেন। হাইকোর্টের আদেশ নির্দিষ্ট কিছু দাগের জমিসংক্রান্ত। বন্দরের সীমানা নির্ধারণে তা বাধা নয়। তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া জমি রক্ষায় পিলার বসানো জরুরি। তা না হলে পুনরায় দখল হয়ে যেতে পারে। ২০২৩ সালেও এমনটি হয়েছিল।
১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার নদী বন্দরের দখলমুক্ত জায়গার সীমানা চিহ্নিতকরণের কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অভিযান স্থগিত করেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। অভিযান আবারো চলবে বলে জানালেও তার দিন তারিখ জানায়নি বিআইডব্লিউটিএ।












