কক্সবাজারে শিক্ষার্থীদের সাথে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ অন্তত ১০ জন। গুলিবিদ্ধ একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপি অফিসে আগুন দেয়। দুর্বৃত্তরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের বয়স আনুমানিক ২৪ বছর। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। গুলিবিদ্ধরা হলেন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সিফাত, সরকারি কলেজের ফরহাদ, বিয়াম ল্যাবের্যাটরি স্কুলের সামি, তুহিন, আবদুল্লাহ, আমিন ও পথচারি সোনামিয়া।
গতকাল বেলা ৩টায় শহরের কালুর দোকান এলাকায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা এক দফার দাবিতে নানা শ্লোগান দেয়। এক ঘণ্টা সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা মিছিল সহকারে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে যায়। এ সময় পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নেয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। একই সময়ে শহীদ স্মরণী মোড়ে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তারা আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দেয়। সাড়ে ৫টার দিকে সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে শহরের অভ্যন্তরে আসতে থাকে শিক্ষার্থীদের একটি দল। মিছিলটি জেলা আওয়ামী লীগ অফিস পর্যন্ত আসলে সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। এ সময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থীদের আরেকটি মিছিল শহীদ মিনার অভিমুখে যাওয়ার পথে শহীদ স্মরণী মোড়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার ও পুলিশ সুপার মোড়ে অবস্থান নেয়। অপরদিকে শহীদ স্মরণী মোড় ও বিমানবন্দর সড়ক এলাকায় অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষে পথচারী ও শিক্ষার্থীসহ ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ একজনের মৃত্যু হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিছু নেতাকর্মী জেলা বিএনপি অফিস জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে।
আহত শিক্ষার্থী সামি ও সিফাত বলেন, বাস টার্মিনাল থেকে মিছিল নিয়ে লালদিঘি পর্যন্ত আসলে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে থেকে তাদের উপর হামলা করা হয়। পরে তারা দৌড়ে শহীদ স্মরণী মোড়ে গেলে সেখানেও তাদের উপর গুলি চালানো হয়।
জেলা শ্রমিক লীগ নেতা ওসমান গণি বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে। শিক্ষার্থীদের উপর কেউ গুলি চালায়নি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশিকুর রহমান বলেন, হাসপাতালে ১০–১২ জনকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। তারমধ্যে অধিকাংশ গুলিবিদ্ধ। বর্তমানে হাসপাতালে ৭ জন ভর্তি আছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। গুলিবিদ্ধ একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। তার পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তবে তার আনুমানিক বয়স প্রায় ২৪–২৫ হতে পারে। তার মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।