অর্থনীতির মুকুট হচ্ছে পর্যটন। পর্যটনশিল্প ১০৯টি শিল্পকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এটি প্রতি আড়াই সেকেন্ডে একটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। একজন পর্যটকের আগমনে সেবাখাতে ১১ জন মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়। পরোক্ষভাবে কাজ পান আরও ৩৩ জন। অর্থাৎ এক লাখ পর্যটকের আগমনে ১১ লাখ কর্মসংস্থান যুক্ত হয়।
বর্তমানে কক্সবাজার পর্যটনশিল্পে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। গত ৬ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, এখন পর্যটকে টইটম্বুর দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজার। গত শনিবার সরকারি ছুটির দিনে কক্সবাজার শহর সংলগ্ন সৈকতে বসে লাখো মানুষের মিলনমেলা। হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেকসহ শহরের বাইরের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও ছিল হাজার হাজার পর্যটকের ভিড়। হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ৪ মাসের মধ্যে গত শনিবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে। শনিবার সকাল ও দুপুরে কক্সবাজার শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটক সপরিবারে অথবা দলবেঁধে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরছেন। কেউবা আবহাওয়ার সতর্কতা সংকেত উপেক্ষা করে সাগরে নেমে গোসল করছেন। কক্সবাজারে সপরিবারে বেড়াতে আসা চট্টগ্রামের পর্যটক বলেন, প্রথমদিন সমুদ্র সৈকত ও শহরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করেছি, খুবই ভালো লেগেছে। কক্সবাজার একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহর। সপরিবারে বেড়াতে আসা আরেক পর্যটক বলেন, আমরা সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রায় ২ কিমি সৈকত পায়ে হেঁটে উপভোগ করেছি। ইনানীসহ শহরের আশেপাশের সমুদ্র সৈকতেও ঘুরেছি। চমৎকার আবহাওয়ার মাঝে এবারের ভ্রমণের অনুভূতি অতুলনীয়।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দীর্ঘ ২ মাস দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে চরম মন্দাকাল গেছে। তবে গত সপ্তাহ থেকে হাজার হাজার পর্যটকের আনাগোনায় আবারও স্বরূপে ফিরেছে কক্সবাজার। আর শনিবার সরকারি ছুটির দিনে কক্সবাজারে লক্ষাধিক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। যেটি গত ৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার হোটেল–মোটেল–গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, শুক্রবার কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে গড়ে ৯০ ভাগ কক্ষ ভাড়া হয়েছে। আর শনিবার ৯৫ ভাগ থেকে শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ বছর কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছি।
আজাদীতে প্রকাশিত অন্য এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজার, যার একদিকে বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সৈকত, অপরদিকে পাহাড়। এ অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর কক্সবাজারে ছুটে আসেন লক্ষ লক্ষ ভ্রমণপিপাসু মানুষ। আর এসব মানুষকে মানসম্মত সেবা দিতে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে ৫ শতাধিক হোটেল–মোটেল, ২ সহস্রাধিক রেস্তোরাঁ ও দোকানপাটসহ হাজার হাজার মানুষের জীবিকাক্ষেত্র। দেশের লক্ষ লক্ষ ভ্রমণপিপাসু মানুষের পাশাপাশি স্থানীয় হাজার হাজার পরিবারেও প্রশান্তি আনছে এই পর্যটন ক্ষেত্র। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। এসব হোটেলে প্রায় ২০ হাজার কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, দেশের পর্যটন শিল্পের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও। আমরা যদি বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করতে চাই, তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ‘কক্সবাজার’–এর নামটি সর্বাগ্রে চলে আসে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি টেকনাফ সৈকত, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, উখিয়া সৈকত, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক প্রভৃতি নামও পর্যটন শিল্পের খাতায় চলে আসবে।
তবে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের অগ্রগতিতে প্রধান অন্তরায় হলো এলাকার রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা। শহরের অভ্যন্তরের সড়কগুলোর দুর্বিষহ অবস্থা এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে দুর্গন্ধ ছড়ানো ময়লার স্তূপ পুরো নগরীর পরিবেশ বিপন্ন করে তুলেছে। কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের অগ্রগতি যে হচ্ছে না, তা নয়। তবে পরিবেশের বিষয়টি নজরে রেখেই উন্নয়ন করতে হবে। পরিবেশ ঠিক না থাকলে পর্যটকরা স্বস্তি পাবেন না। কক্সবাজারের পাহাড়, সমুদ্র সৈকত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা ও সামগ্রিক পরিবেশ। তাই রাস্তাঘাটের আরো উন্নয়ন ঘটিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতরকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলে এ শিল্পকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন।