কক্সবাজারের জেলেরা ফের মাছ ধরতে সাগরে রওয়ানা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর থেকে সতর্কতা সংকেত প্রত্যাহার করা হয়। এরপর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারের ৯০% ট্রলারই সাগরে রওয়ানা দিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে আবহাওয়া বিভাগ ৩ নং সতর্কতা সংকেত জারি করে। তখন জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ করে ঘাটে ফিরে এসেছিল।
আবহাওয়া বিভাগের গতকাল সকালের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাগরে ঝড়ো হাওয়ার আশংকা না থাকায় দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর থেকে সকল সতর্কতা সংকেত প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরপরই জেলেরা অনুকূল আবহাওয়ায় ট্রলার নিয়ে সাগরে রওয়ানা দিতে শুরু করে বলে জানান কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারের ৯০% ট্রলারই ইতোমধ্যে সাগরে রওয়ানা দিয়েছে। বাকিগুলোও কাল (আজ) শুক্রবারের মধ্যে সাগরে রওয়ানা দেবে।
ট্রলার মালিকরা জানান, গত দেড় মাসে সাগরে চারবার লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। ফলে বার বার মাছ ধরতে গিয়েও মাছ না ধরেই ফিরে আসতে হয় জেলেদের। এ কারণে ট্রলার মালিকদের বিপুল লোকসান গুনতে হয়েছে। এর আগে চলতি মাসের ৯ তারিখ লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে সপ্তাহজুড়ে চলা আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতা সংকেত প্রত্যাহারের পর গত ১৬ তারিখ ট্রলারগুলো মাছ ধরতে গিয়েছিল। তবে মাত্র তিনদিন পর ফের সাগরে লঘুচাপ তৈরির কারণে মাছ না ধরেই ফিরতে হয় জেলেদের। এর আগে গত ১৮ আগস্ট একই কারণে সাগরে সতর্কতা সংকেত জারি করে আবহাওয়া বিভাগ। এ সময় সাগর থেকে ফেরার পথে অন্তত দুটি বোট ডুবির ঘটনা ঘটে, এতে ৮ জন জেলে মারা যায়। প্রায় এক সপ্তাহ পর আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে সাগরে পুনরায় মাছ ধরা শুরু হয়। এর আগেও একই কারণে গত ৬ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সাগরে মাছধরা বন্ধ ছিল। এরপর আবহাওয়া দপ্তর সতর্কতা সংকেত প্রত্যাহার করায় গত ১৬ আগস্ট থেকে ট্রলারগুলো ফের সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র দুদিন পর গত ১৮ আগস্ট একই কারণে আবহাওয়া দপ্তর ফের ৩ নং সতর্কতা সংকেত জারি করে। ফলে মাছ ধরা শুরু না হতেই ঘাটে ফিরতে হয় জেলেদের।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির মতে, কক্সবাজারে ছোটবড় প্রায় ৮ হাজার মাছ ধরার বোট রয়েছে। এতে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১ লাখ জেলে। একেকটি বড় বোটে ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট বোটে ৫ থেকে ১৯ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে। ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। এসব জেলে বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।
বঙ্গোপসাগরে বারবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া তৈরি হওয়ার কারণে অনেকদিন ধরে সাগরের মাছের দেখা মিলছে না বলে জানান শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী।