আগের দুই ম্যাচে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। জ্যামাইকার শেষ ম্যাচটি ছিল অসিদের জন্য হোয়াইট ওয়াশ মিশন। আর সে মিশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একেবারে লজ্জায় ডুবিয়ে ৩–০ তে সিরিজ জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ২৭ রানে অল আউট হয়েছে ক্যারিবীয়রা। যা তাদের সর্বনিম্ন দলীয় ইনিংস। জ্যামাইকায় দিবা–রাত্রির টেস্টের তৃতীয় দিন আক্ষরিক অর্থেই যেন বল হাতে আগুন ঝরান শততম টেস্ট খেলতে নামা স্টার্ক। রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে মাত্র ৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে উইন্ডিজের ব্যাটিং ধসিয়ে দেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি পেসার। পরে বোল্যান্ড হ্যাটট্রিকের আনন্দে ভাসলে মাত্র ২৭ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস। ২০৪ রানের মাঝারি লক্ষ্য দিয়েও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতে যায় ১৭৬ রানের বিশাল ব্যবধানে। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার ঘটনা আছে স্রেফ একটি। ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অকল্যান্ড টেস্টে ২৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। প্রায় ৭০ বছর পর অল্পের জন্য সেই রেকর্ডে বসেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাম। পেসারদের দাপটের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩–০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেই আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে যাত্রা শুরু করল অস্ট্রেলিয়া।
ক্যারিবিয়ান টপ–অর্ডারে ধস নামিয়ে নিজের প্রথম ১৫ বলেই ৫ উইকেট নিয়ে নেন স্টার্ক। টেস্ট ইতিহাসে স্পেলের শুরু থেকে এত কম বলে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি নেই আর কারও। সব মিলিয়ে ৭.৩ ওভারে ৯ রানে তার শিকার ৬টি। শততম টেস্টে এটিই সেরা বোলিংয়ে রেকর্ড। গোলাপি বলের টেস্টে আগে থেকেই সবার ওপরে স্টার্ক। সেই রেকর্ড আরেকটু সমৃদ্ধ করে ২৭ ইনিংসে এখন তার শিকার ৮১ উইকেট। আর কারও ৫০ উইকেটও নেই। ইনিংসে ৫ উইকেট পাঁচবার। আর কারও নেই দুবারের বেশি। টেস্টে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার দশম বোলার বোল্যান্ড। নিজ দেশের হয়ে ২০১০ সালে পিটার সিডলের পর তিনিই প্রথম পেলেন হ্যাটট্রিকের দেখা। স্টার্ক ও বোল্যান্ডের তোপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাত ব্যাটসম্যান আউট হন রানের খাতা খোলার আগে। টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ইনিংসে দেখা গেল এত ব্যাটসম্যানের শূন্য রানে আউট হওয়ার ঘটনা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ২০৪ রানের । গোলাপি বলে স্টার্কের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে পাঁচ ওভারের মধ্যেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম বলেই চমৎকার ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড জন ক্যাম্পবেল। পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউ অভিষিক্ত কেভলন অ্যান্ডারসন। ওভারের শেষ বলে একই ধরনের ডেলিভারিতে ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বোল্ড ব্র্যান্ডন কিং। স্টার্কের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে আবারও ডানহাতির জন্য ভেতরে ঢোকানো ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ মিকাইল লুইস। একইসঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটে পূর্ণ হয় স্টার্কের ৪০০ উইকেট। এই মাইলফলকে অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ বোলার তিনি। এক বল পর শেই হোপকে ফিরিয়ে টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম ৫ উইকেট পূর্ণ করেন স্টার্ক। তার বোলিং বিশ্লেষণ তখন ২.৩–২–২–৫। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর বোর্ডে তখন ৫ উইকেটে মাত্র ৭ রান। পরের ওভারে হেইজেলউডও উইকেট শিকারে যোগ দিলে ১১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে ক্যারিবিয়রা। টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিম্ন ২৬ রান তখন অনেক দূরের পথ। কিন্তু স্লিপে একাধিক ক্যাচ ছেড়ে দেন স্যাম কনস্টাস। তবু সুযোগ ছিল ২৬ রানে অলআউট করার। কিন্তু কনস্টাসেরই মিস ফিল্ডিংয়ে ২৭তম রান পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। ইনিংসের ১৪তম ওভারে প্রথম তিন বলে জাস্টিন গ্রিভস, শামার ও জোমেল ওয়ারিক্যানকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন বোল্যান্ড। পরের ওভারে জেডেন সিলসকে বোল্ড করে জয় নিশ্চিত করেন স্টার্ক। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার।