সিরিজটা নিশ্চিত হতে পারতো দ্বিতীয় ম্যাচেই। কিন্তু প্রথমবারের মত সুপার ওভারের মুখোমুখি হয়ে সে ম্যাচটি জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছিল ক্যারিবীয়রা। তবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটাকে বাংলাদেশ যে বেশ গুরুত্বের সাথে নিয়েছিল তা পরিষ্কার হয়ে ওঠে ম্যাচের শুরু থেকেই। টানা চারটি ওয়ানডে সিরিজে হারা বাংলাদেশের জন্য এই সিরিজটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সিরিজটি জিততে মরিয়া ছিল টাইগাররা। কিন্তু সিরিজের শুরু থেকেই মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে কারো টার্নিং উইকেট নিয়ে চলতে থাকে সমালোচনা। সে সাথে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংও ছিল কাটগড়ায়। তবে সিরিজের শেষ ম্যাচে সব সমালোচনার জবাব দিয়ে ১৭৯ রানের বিশাল ব্যাবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিল টাইগাররা। স্পিনারদের রাজত্বের উইকেটে রান পেলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। আর স্পিনাররাতো তাদের ভেল্কি অব্যাহতই রাখল। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় জয়। প্রথমটা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৩ রানের। ২০২৩ সালে সিলেটে এই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। টানা চার সিরিজ হারের পর আবার সিরিজ জয়ের ধারায় ফিরল বাংলাদেশ। যে উইকেটে রান করাটা সবচাইতে কঠিন কাজ বলা হচ্ছিল সেই উইকেটেই কিনা রানের বন্যা বইয়ে দিল বাংলাদেশ দল। বিশেষ করে বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার সাইফ হাসান এবং সৌম্য সরকার। মূলত এ দুজনের ব্যাটিংয়ের পর স্পিনারদের ঘূর্ণির মুখে পড়ে একরকম উড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি ২–১ ব্যবধানে জিতে নেয় বাংলাদেশ। যদিও এই সিরিজটি হতে পারতো ৩–০। এই ম্যাচের একাদশে একজন পেসার থাকলেও তার হাতে বল তুলে দেননি টাইগার অধিনায়ক। বলা যায় সেই পেসার মোস্তাফিজকে বল দেওয়ার সুযোগই পাননি মিরাজ।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের দুই ওপেনার ইনিংসের শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট চালাতে থাকেন। সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান পাওয়ার প্লেতে ৭৪ রান তুলে নেন। এরপর যতই সময় গড়িয়েছে দুজন ততই আগ্রাসী হয়ে উঠেন। উইকেটের চার পাশে চার আর ছক্কার ফুলঝুড়ি ছুটাতে থাকেন। দুজনই ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু কারোই সেটা হলো না। দুজনকেই ফিরতে হলো সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশা নিয়ে। ১৭৬ রানের দুর্দান্ত উদ্বোধনী জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। মাত্র ৭২ বলে ৬টি চার ও ৬টি ছক্কার সাহায্যে ৮০ রানের এক ঝলমলে ইনিংস খেলে সাইফ হাসান ফিরেন চেইসের বলে গ্রেভসের হাতে ক্যাচ দিয়ে। তবে এই ওপেনারের এটি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। সাইফ ফিরলেও সৌম্য শতকটা তুলে নেবেন তেমন প্রত্যাশাই ছিল টাইগার শিবিরে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণের সঙ্গীকে হারিয়ে তিনি আর ঠিকতে পারলেন না বেশিক্ষণ। ৮৬ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৯১ রান করে সৌম্য সরকার ফিরেন আকিল হোসেনের শিকার হয়ে। আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি মিস করা সৌম্য এই ম্যাচে মিস করলেন সেঞ্চুরি। ২৮.১ ওভারে বাংলাদেশ দলের রান তখন ২ উইকেটে ১৮১। রানের চাকা তখন আরো দ্রুত ঘুরার কথা। কিন্তু উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর বাংলাদেশের ইনিংসের গতি কিছুটা মন্থর হয়ে পড়ে। নাজমুল হোসেন শান্ত এবং তাওহিদ হৃদয় ৫০ রান যোগ করেছেন বটে। কিন্তু বল খরচ করেছেন ৭০টি। ৪৪ বলে ২৮ রান করে ফিরেন হৃদয়। একাধিকবার জীবন পেয়েও নিজের হাফ সেঞ্চুরিটা তুলে নিতে পারলেন না শান্ত। ফিরেছেন ৫৫ বলে ৪৪ রান করে। রিশাদ হোসেন, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও নাসুম আহমেদ মিলে যোগ করলেন ১০ রান। তবে ইনিংসের একেবারে শেষে নুরুল হাসান সোহান ও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করলে ২৯৬ রানে পৌঁছে বাংলাদেশের ইনিংস। অথচ যা হতে পারতো সাড়ে তিনশর কাছাকাছি। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে মিরাজ করেন ১৭ রান। আর সোহান মাত্র ৮ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে স্পিনার আকিল হোসেন ছিলেন সবচেয়ে সফল। তিনি ৪১ রানের বিনিময়ে ৪টি উইকেট নেন।
২৯৭ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই বাংলাদেশ দলের স্পিনার নাসুম আহমেদের ঘূর্ণির মুখে পড়ে খেই হারিয়ে ফেলেন ক্যারিবীয় ব্যাটাররা। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আথানজেকে যখন ফেরান নাসুম তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোর্ডে জমা পড়েছে মাত্র ১৬ রান। নিজের পরের ওভারে আকিম অগাস্টিকে ফেরান নাসুম। টানা তৃতীয় ওভারে আরেক ক্যারিবীয় ওপেনার ব্রেন্ডন কিংকে ফেরান নাসুম। এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান। নাসুম টানা তিন উইকেট নেওয়ার পর ক্যারিবীয় বধ অভিযানে নামেন তানভীর এবং রিশাদ। দু প্রান্ত থেকে এ দুজনের সাঁড়াশি আক্রমণে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়তে থাকে ক্যারিবীয় ব্যাটিং। একে একে শাই হোপ, রাদারফোর্ড, রোস্টন চেইস এবং কার্টিরা ফিরে আসেন। এক সময় শত রানের নিচে অল আউট হওয়ার হুমকিতে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১১৭ রানে অল আউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষটা করেন অধিনায়ক মিরাজ। বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন নাসুম আহমেদ এবং রিশাদ হোসেন। আর ২টি করে নিয়েছেন মিরাজ এবং তানভীর। তিন টেস্টের এই সিরিজে ১২ উইকেট নিলেন রিশাদ হোসেন। ম্যাচের সেরা হয়েছেন সৌম্য সরকার। আর সিরিজ সেরা হয়েছেন রিশাদ হোসেন।












