চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল এলাকা থেকে সোয়া চার কোটি ঘনফুট বালি উত্তোলন শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ওয়াসার বহুল প্রত্যাশিত স্যুয়ারেজ প্রকল্পের মাটি ভরাটের জন্য এই বালি তোলা হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ বালি উত্তোলনের ফলে বে টার্মিনালের চ্যানেলের গভীরতা বেশ বৃদ্ধি পাবে। একই সাথে এই বালি উত্তোলন কার্যক্রম বন্দর কর্তৃপক্ষের বে-টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা কিংবা প্রাকৃতিক চরের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় বন্দর কর্তৃপক্ষ তার নজরদারি বাড়িয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, পতেঙ্গা এলাকায় ২৩শ’ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আগামী একশ’ বছরের বন্দর হিসেবে বে টার্মিনাল নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বে টার্মিনালের অদূরে বেড়িবাঁধের ভিতরে ১৫৫ একরেরও বেশি জায়গার উপর চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরীর প্রথম স্যুয়েরেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করেছে। চট্টগ্রাম মহানগরীকে বিশ্বমানের বাসযোগ্য একটি শহরে উন্নীত করতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওয়াসা। বহু কাঠখড় পোড়ানোর পর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় শুরুতে ১২২ একর জায়গার উপর দুইটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হবে। বাসাবাড়ির টয়লেট থেকে পাইপের মাধ্যমে বর্জ্য উক্ত ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে যাবে। যেখান থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিশোধন করা হবে।
ওয়াসার প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জায়গা বেড়িবাঁধ থেকে বেশ নিচু। প্রায় দশ ফুট ভরাট করার পরই ভূমিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। ১০ ফুট মাটি ভরাট করার জন্য বঙ্গোপসাগরের বে টার্মিনাল এলাকা থেকে মাটি উত্তোলন করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। একটি বেসরকারি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বে টার্মিনাল থেকে বালি তোলা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা ৪ কোটি ২৩ লাখ ৭৮ হাজার ফুট বালি উত্তোলন করে ১২২ একর ভূমি প্রকল্পের জন্য তৈরি করার কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২৫ লাখ ঘনফুট বালি উত্তোলন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা বেসরকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার বাংলার মাধ্যমে বালি উত্তোলন করছে। এই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে দুইটি বড় ড্রেজারের মাধ্যমে বালি উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি আরো দুইটি ড্রেজার বালি উত্তোলনে নিয়োজিত করবে বলেও জানিয়েছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান বালি উত্তোলনের সময় স্থানীয় একটি চর থেকে বালি নিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। এতে বে টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। বিশেষ করে যে চরটির কারণে বে টার্মিনালের চ্যানেল তৈরি হয়েছে সেই চরটি প্রাকৃতিক একটি ব্রেকওয়াটারের মতো কাজ করছে। এটি ধ্বংস হলে বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নই ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে বন্দরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মন্তব্য করেছে। তারা বলেন, ওয়াসার নিয়োজিত বেসরকারি ঠিকাদার বালি উত্তোলনের সুবিধার জন্যই মূলতঃ চর থেকে বালি কাটছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে তা ঠেকিয়েছে এবং চ্যানেলের বাইরে গিয়ে চর থেকে যাতে বালি উত্তোলন করা না হয় সেজন্য ড্রেজার দুইটি মনিটরিং করা হচ্ছে। দুই ড্রেজারেই জিপিএস লাগিয়ে দেয়ার মাধ্যমে এগুলোর গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্যুয়ারেজ প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় বালি উত্তোলনের অনুমোদন আমরা দিয়েছি। কিন্তু কোনোভাবেই বে টার্মিনালের ক্ষতি হয় এমন কিছু কাউকে করতে দেয়া হবে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসা স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে অনেক মাটি ভরাট করতে হবে। এই মাটি বঙ্গোপসাগর থেকেই উত্তোলন করা হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে আমরা অনুমোদন নিয়েছি। বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে অনেক সহায়তা করছে। এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় মাটি উত্তোলনের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই বে টার্মিনালকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না। তিনি বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা সজাগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।