ওয়াসার কারণে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ নষ্ট হচ্ছে

অভিযোগ মেয়রের চসিকের অনুমতি ছাড়া রাস্তা কাটলে আইনানুগ ব্যবস্থা ‘আমার চট্টগ্রাম’ অ্যাপস শীঘ্রই চালু হবে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার কারণে নগরে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তার দাবি, স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ওয়াসা সড়ক কাটার পর যে পরিমাণ টাকা কর্পোরেশনকে দেয় বাস্তবে তার কয়েক গুণ বেশি ব্যয় হয় ওসব সড়ক সংস্কারে।

গতকাল রোববার টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চসিকের বিভাগীয় সমন্বয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মেয়র বলেন, ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজের কারণে নগরে যে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে তা আমরাও লক্ষ্য করছি। ওয়াসার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ‘তারা ৯৩ কিলোমিটার সড়ক কেটেছে এবং এর মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার সড়ক খননের পর সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করেছে। এজন্য সংস্কারের ব্যয় বাবদ চসিককে ৮২ কোটি টাকাও দেয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন সংস্কার করছে না।’ কিন্তু তারা (ওয়াসা) যে পরিমাণ টাকা দিয়েছে তার ২ থেকে ৩ গুণ খরচ করে সিটি কর্পোরেশন থেকে সড়ক সংস্কারে কাজ করতে হয়। অনেক জায়গায় আমরা নতুন রাস্তা শেষ করার পরই ওয়াসা আবার সেখানে খনন কাজ শুরু করেছে। এতে জনগণের কষ্ট বাড়ছে, সাথে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ।

সভায় ওয়াসা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে কোনো সমন্বয় না করেই সড়ক কাটছে বলে অভিযোগ করেন ডা. শাহাদাত। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগ হচ্ছে উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় চসিকের অনুমতি ছাড়া রাস্তা কাটা যাবে না বলে ঘোষণা দেন মেয়র। একইসঙ্গে ওয়াসার ঠিকাদাররা অনুমতি ছাড়া রাস্তা কেটে জনভোগান্তি সৃষ্টি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

মেয়র বলেন, কোন সড়ক টেন্ডারের আওতায় আছে বা নতুন করে নির্মাণ হবে আমরা তার তালিকা দেব। সেই সড়কগুলোতে কোনোভাবেই কাটাকাটি করা যাবে না। অনুমতি ছাড়া রাস্তা কাটলে তা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হবে।

তিনি বলেন, সড়কে খনন করলে ওয়াসাকে প্রতিটি সড়ক হস্তান্তরের আগে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে হবে। কোথায় কত ক্ষতি হয়েছে এবং সংস্কারে আসল খরচ কত লাগবে তার হিসাব দিতে হবে। অন্যথায় একতরফাভাবে দায়ভার নেবে না সিটি কর্পোরেশন।

প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশনা দিয়ে মেয়র বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর ভাঙা রাস্তা ও গর্তগুলো দ্রুত প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে। চলমান উন্নয়ন কাজও দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেন তিনি। প্রতিটি রাস্তার সঙ্গে কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন মেয়র।

অন্যান্য : সভায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। চসিকের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির বিষয়ে মেয়র বলেন, নগরে যারা ব্যবসা করবে তাদের অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। কোনো অজুহাতে ছাড় দেওয়া হবে না। যেখানে চট্টগ্রাম নগরীতে ৪ থেকে ৫ লক্ষ ট্রেড লাইসেন্স থাকার কথা, সেখানে বর্তমানে আছে মাত্র ১ লক্ষ ২০ হাজারের মতো।

তিনি বলেন, বাইরে থেকে দৃশ্যমান প্রতিটি সাইনবোর্ডের জন্য নির্ধারিত কর পরিশোধ করতে হবে। একইভাবে বড় বড় ডিফল্টাররা বছরের পর বছর হোল্ডিং ট্যাঙ দেয় না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে সাধারণ মানুষ যাতে আতঙ্কিত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।

মেয়র বলেন, জন্মসনদ বা অন্যান্য সেবার সঙ্গে হোল্ডিং ট্যাঙকে জড়িয়ে দেওয়া যাবে না। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনে ‘রাজস্ব সপ্তাহ’ চালু করা হবে। এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবসায়ীরা কর পরিশোধ করবেন। তবে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে।

ডেঙ্গু নিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব আবারও বেড়েছে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে চসিক পরিচ্ছন্ন বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে মেডিকেল অফিসার ও প্রাইমারি হেলথ সেন্টারের মাধ্যমে সচেতনতামূলক ও চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হবে।

ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় নতুন একটি ওষুধ ‘বিটিআই’ অনুমোদন পেলে মাঠপর্যায়ে প্রয়োগের জন্য আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যক্রম শুরু হবে।

মেয়র বলেন, শীঘ্রই চট্টগ্রামবাসীর জন্য ‘আমার চট্টগ্রাম’ নামে একটি অ্যাপস চালু করা হবে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে নাগরিকরা যেকোনো সময় কোথায় ময়লা পড়ে আছে তার ছবি তুলে ময়লার অবস্থান জানাতে পারবেন। এতে করে আমাদেরও পরিষ্কার কার্যক্রম সচল রাখতে সুবিধা হবে। একইসাথে কোথায় সড়ক গর্ত আছে, কোথায় কি সমস্যা রয়েছে তা ছবি তুলে সাথে সাথে আমাদের পাঠাতে পারবেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা রক্তিম চৌধুরী, প্রণয় চাকমা, মৌমিতা দাশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতি সর্ববিদ্যা, মো. জিল্লুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম, জসিম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী ফারজানা মুক্তা, আশিকুল ইসলাম, আনোয়ার জাহান, রিফাতুল করিম, তাসমিয়া তাহসিন, নাসির উদ্দিন রিফাত, মাহমুদ শাফকাত আমিন, শাফকাত বিন আমিন, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধথাইরয়েড ক্যানসারের ক্যাপসুলের সংকট
পরবর্তী নিবন্ধফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে মহোৎসবের