আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হওয়ার ক্ষত এখনও দগদগে। দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে সমর্থকদের কাছে হেনস্তা হওয়ার আঘাত তো রয়েছেই। ব্যাটে– বলের পারফরম্যান্সে যেমন হতশ্রী তেমনি ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থাও যেন তলানিতে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার নতুন মিশন শুরু হচ্ছে আজ বাংলাদেশের। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ শুরু আজ শনিবার দুপুর দেড়টায়। আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থান নবম আর বাংলাদেশের দশম। তবে এই সিরিজটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ মেহেদী হাসান মিরাজের দলের জন্য। মাত্রই আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশড হয়েছে দল। ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের একসময়ের গর্বের সংস্করণ ওয়ানডে এখন গ্লানিময়। বাংলাদেশের কোচ ফিল সিমন্স অবশ্য তেমনটি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ব্যাপারটি কেবল একটি সিরিজের। আফগানদের বিপক্ষে ব্যাটিং ব্যর্থতাটুকু মনে করিয়ে দিয়ে তিনি শোনালেন ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদ।
এটা ঠিক যে একটি বাজে সিরিজ গিয়েছে আমাদের। যেখানে আমরা ভালো জুটি গড়তে পারিনি, বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোয়। শুরুতে জুটি হয়েছে, মিডল অর্ডার ভেঙে পড়েছে। ব্যাপারটি তাই উপলব্ধি করার যে, মাঝের সময়টায় আমাদের জুটি গড়তে হবে। আর ক্রিকেটাররা এখানেই কাজ করার চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব। একটি বাজে সিরিজ আমাদের গিয়েছে এবং মানছি যে, ব্যাটাসম্যানরা খারাপ করেছে। তবে শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে আমাদের। ওয়ানডেটা বাংলাদেশ সব সময় ভাল খেলে। কিন্তু গত চার সিরিজের সবকটিতেই হেরেছে টাইগাররা। সবমিলিয়ে সবশেষ আট সিরিজে জয় আছে কেবল একটিতে। এবার তাই নতুন করে পথ চলা। নতুন সিরিজ, নতুন প্রতিপক্ষ আর নতুন প্রত্যাশা। আর এই নতুন শুরুর জন্য বাংলাদেশ দলও প্রস্তুত। আফগানিস্তানের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার ধাক্কাটা অবশ্য সবচেয়ে জোরালো। সে মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার সময় খুব একটা পায়নি ক্রিকেটাররা। তবে চেষ্টা করছে ক্রিকেটাররা নিজেদের ফিরে পেতে। আফগানিস্তানের কাছে হারের পর দলের অধিনায়ক এবং কোচ উভয়েই বলেছেন, আমরা এর চেয়ে ভালো দল। আমরা জানি আমরা এর চেয়ে ভালো খেলতে পারি। এভাবেই ভাবার চেষ্টা করছি আমরা। সে চেষ্টার প্রতিফলন আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে ঘটাতে চায় বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের সবচাইতে বেশি ব্যর্থতা ব্যাটিংয়ে। বিশেষ করে মিডল অর্ডারে ভয়াবহ অবস্থা চোখে পড়ে। মিডল অর্ডারের সে ব্যর্থতা ঘুচাতে এই সিরিজে সুযোগ দেওয়া হয়েছে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে। সবশেষ বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা এই কিপার–ব্যাটার ওয়ানডেতে ডাক পেলেন প্রথমবার। আজ তার অভিষেকের সম্ভাবনা আছে ভালোভাবেই। তবে টপ অর্ডারেও দুর্ভাবনা কম নয়। তানজিদ হাসান বারবার সুযোগ পেলেও বড় কিছু করতে পারেননি। সাইফ হাসান টি–টোয়েন্টিতে আলো ছড়ানোর পর ওয়ানডেতে সম্ভাবনার ঝিলিক দেখিয়েছেন। পারভেজ হোসেন ইমন আপাতত ইনজুরির কারণে বাইরে। দুই বছর পর ফিরে এক ম্যাচে বাজে ব্যাটিংয়ের পরই জায়গা হারিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তবে ফেরানো হয়েছে সৌম্য সরকারকে। অভিজ্ঞ ওপেনারকে দেখা যেতে পারে প্রথম ম্যাচের একাদশে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে গত আগস্টে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। তাদের সঙ্কট তাই হয়তো বাংলাদেশের মতো তীব্র নয়। তবে র্যাঙ্কিংয়ের অবস্থান ও রটিং পয়েন্ট বলছে তাদের অবস্থাও সঙ্গীন। প্রথম দুই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা গত বিশ্বকাপে বাছাইপর্ব উতরাতে ব্যর্থ হয়েছিল। এবারও তারা বাছাইয়ে খেলার শঙ্কায় আছে। বাংলাদেশের কাছে হেরে গেলে তাদের বিপদ ঘনীভূত হবে আরও। বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়েই সিরিজ জয়ের তাড়নার কথা শোনালেন কোচ ড্যারেন স্যামি। বলা যায় একই বৃত্তে দাঁড়িয়ে শুরু হতে যাওয়া এই সিরিজে শেষ পর্যন্ত কার হাসি সেটাই এখন দেখার।