হঠাৎ করে বিদ্রোহী হয়ে আলোচনায় এখন রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ। বেসরকারি সামরিক কোম্পানি ওয়াগনার গ্রুপের হয়ে রাশিয়ার পক্ষে এখন ১০ হাজার ভাড়াটে সৈন্য ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে বলে ধারণা করা হয়। সম্প্রতি ইউক্রেনের সৈন্যদের থেকে বাখমুতের দখল নিতে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল লড়াইয়ে এই যোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
নিজেকে বেসরকারি সামরিক কোম্পানি হিসেবে দাবি করা এই গ্রুপ রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করলেও রুশ সরকার এখন এর লাগাম টানার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ওয়াগনার আসলে কী, কারা এই গ্রুপে এবং কী কাজ করছে?
আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পিএমসি ওয়াগনার’ নামে পরিচিত ওয়াগনার গ্রুপ প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। সেসময় পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করছিল তারা। যখন এটি একটি গোপন সংগঠন ছিল, তখন এর সদস্যরা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে কাজ করছিল। সেসময় এর ৫ হাজার যোদ্ধা ছিল বলে মনে করা হয়, যাদের বেশিরভাগই রাশিয়ার অভিজাত বাহিনৗ ও বিশেষ বাহিনী থেকে আসা প্রবীণ অভিজ্ঞ যোদ্ধা। এরপর থেকে ওয়াগনারের কার্যক্রম যথেষ্ট বেড়েছে। খবর বিডিনিউজের।
চেচনিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার অভিজ্ঞ সমর কৌশলী প্রাক্তন রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন ওয়াগনারের প্রথম ফিল্ড কমান্ডার ছিলেন বলে মনে করা হয়। তার পুরনো রেডিও কল সাইনের নামানুসারে গ্রুপটির নামকরণ করেছিলেন তিনি। ওয়াগনার গ্রুপের এখনকার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। ধনাঢ্য এই ব্যবসায়ীকে ‘পুতিনের শেফ’ নামেও ডাকা হয়, কারণ তিনি ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহ করতেন।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত জানুয়ারিতে জানায়, ওয়াগনার এখন ইউক্রেনে তাদের প্রায় ৫০ হাজার যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ইউক্রেন অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল চলতি বছরের শুরুতে জানায়, ইউক্রেনে ওয়াগনারের প্রায় ৮০ শতাংশ যোদ্ধাকে আনা হয়েছে কারাগার থেকে। ভাড়াটে যোদ্ধা রাশিয়ায় অবৈধ হলেও ২০২২ সালে কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় ওয়াগনার গ্রুপ। এরপর তারা সেইন্ট পিটার্সবার্গে একটি সদরদপ্তর খোলে। রুশ সংবাদমাধ্যমে একে ‘দেশপ্রেমিক সংগঠন’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার বাখমুত দখল নেওয়ার সময় ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিল ওয়াগনার গ্রুপ। প্রথমে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ওয়াগনার গ্রুপের যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করেনি। যাহোক, ‘সাহসী’ ও ‘নিঃস্বার্থ’ ভূমিকা পালনের জন্য পরবর্তীতে এই ভাড়াটে যোদ্ধাদের তারা প্রশংসা করে।
২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ায় রয়েছে ওয়াগনারের যোদ্ধারা। তারা সরকারপন্থী বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করছে এবং তেলের খনিগুলো পাহারা দিচ্ছে। লিবিয়াতেও এই বাহিনী রয়েছে। তারা জেনারেল খলিফা হাফতারের অনুগত বাহিনীকে সমর্থন করছে। সুদানে সোনার খনি পাহারা দেওয়ারও কাজ করছে বলে মনে করা হয়। পশ্চিম আফ্রিকার মালি সরকার ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওয়াগনার গ্রুপকে ব্যবহার করছে।