কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ দাশকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করায় টেকনাফের ভুক্তভোগীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
আজ রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও মামলার তদন্তশকারী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, সিনহা হত্যা মামলায় ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে রবিবার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন জেল হাজতে আছে। আরেকজন পলাতক।
এদিকে সাবেক ওসি প্রদীপ দাশকে অভিযুক্ত করে কক্সবাজার আদালতে চার্জশিট দেওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন টেকনাফের অনেক ভুক্তভোগী।
এমনই ভুক্তভোগী টেকনাফ পুরান পল্লান পাড়ার বেলুজা ও আমিনা খাতুন বলেন, “আজ টিভির খবরে দেখেছি সাবেক ওসি প্রদীপসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে র্যাব। এতে আমরা অন্তত খুশি। প্রদীপ টেকনাফের অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। সিনহা হত্যা তাই প্রমাণ করে। তার মতো অপরাধীর ফাঁসি হওয়া দরকার। আমরা তার ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।”
তিনি আরো বলেন, “গত ৫ জুলাই দিন দুপুরে টেকনাফ থানা পুলিশের এএসআই নাজিমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘরে ঢুকে আমিসহ ঘরের লোকজনকে ব্যাপক মারধর করে। এরপর আলমিরা ভেঙে স্বর্ণালংকার, দেড় লাখ নগদ টাকা ও জায়গা-জমির কাগজপত্র লুট করে। এ সময় আমাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে টেনেহিঁচড়ে পরিবারের সদস্য কবির আহমদসহ আমাদেরকে থানায় নিয়ে ব্যাপক মারধর করে। পরে আমাদের ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে নগদ দুই লাখ টাকা ঘুষ নেয় নাজিম। তবে ১শ’ পিস ইয়াবা দিয়ে কারাগারে চালান দেয়। দেড় মাস কারাভোগ শেষে আমরা দু’জন জামিনে বেরিয়ে আসলেও এখনও কারাভোগ করছে পরিবারের আরেক সদস্য কবির। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে সরকারের কাছে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”
আরেক ভুক্তভোগী ফরিদা বেগম ওরফে কাজল বলেন, “প্রদীপের অপরাধ এতটা বেশি ছিল যে তার ফাঁসি হলেও কম হবে। এমন কোনো অপরাধ নেই প্রদীপ করেনি। এখনো আমাকে তার দেওয়া মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হয়। কোনো অপরাধ না করেও আমি অপরাধী হলাম। তার চেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে? এখন ভিক্ষার টাকায় আমাকে মামলা চালাতে হচ্ছে। সরকারের কাছে এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।”
তিনি আরো বলেন, “এ বছরের শুরুতে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে আমি সহ ভাই আবদুর রহমান এবং স্বামী আবদুল কাদেরকে আটক করেছিলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। দুই দিন থানা ভবনে তিনতলার একটি কক্ষে আলাদা করে আমাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। এসময় আমাকে চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে। এতে মুমূর্ষু হয়ে পড়ি। এরপরের দিন ৩শ’ পিস ইয়াবা দিয়ে কক্সবাজার কারাগারে পাঠায়। তবে বাঁচতে পারেননি আমার ভাই আবদুর রহমান এবং স্বামী আবদুর কাদের। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পড়েও কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন তারা।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর ট্যাগ লাগিয়ে নিরীহ লোকজনকে থানায় ধরে নিয়ে মোটা অংকের অর্থের জন্য চাপ প্রয়োগ করত ‘ওসির টিম’। যারা টাকা দিতে পারত না তাদের ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়া হতো।