নগরীর কোতোয়ালী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবিরকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে আহত করা এএসআই সন্তু শীলকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
সিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি) আবদুল ওয়ারীশ রোববার (২৩ জুন) বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দায়িত্বপালনরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অপেশাদারি আচরণ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
এর আগে, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বাগেরহাটের আইআই পুলিশ লাইন্সে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু অসুস্থতার মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি ২৯৩ দিন অনুপস্থিত ছিলেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল ঈদ সামগ্রী বিতরণ করতে পাথরঘাটা এলাকায় যান তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
তখন এমপিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবির। এ সময় পেছন থেকে বাঁ হাতের কনুই দিয়ে ওসিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন শিক্ষা উপমন্ত্রীর দেহরক্ষী এএসআই সন্তু শীল। সঙ্গে সঙ্গেই ওসি দাঁড়িয়ে গিয়ে উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ সময় ওসির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন ওই দেহরক্ষী। তখন উপমন্ত্রী ওসিকে মঞ্চে যেতে বলেন। উপমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার পর ওসি জাহিদুল সেখানে গিয়ে তাঁকে বিষয়টি খুলে বলেন।
উপমন্ত্রী এ সময় ওসিকে এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিতে বলেন। এ ঘটনায় ওই সময় নিজ থানায় জিডি করেন কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবির। পাশাপাশি তিনি সিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
এরপর গত বছরের ২৫ এপ্রিল এক আদেশে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। একই দিন আলাদা আরেকটি আদেশে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দিনকে।
তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। গত ২ মে পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে তাকে প্রশাসনিক কারণে সিএমপি থেকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়।
রেঞ্জ কার্যালয় থেকে তাকে বাগেরহাট জেলা পুলিশে যোগদান করতে বলা হয়। এরপর জেলা পুলিশের নির্দেশে তিনি ফকিরহাট মডেল থানায় যোগ দেন। এরই মধ্যে পুলিশের বিভাগীয় অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে ওঠা ওসিকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয় সিএমপি।
গত বছরের ১১ জুন সিএমপি অফিসিয়ালি চিঠি দিয়ে বাগেরহাট জেলা পুলিশকে বিষয়টি জানায়। সিএমপির চিঠি পেয়ে ফকিরহাট থানা পুলিশ তাকে ছাড়পত্র দিয়ে জেলা পুলিশ লাইন্সে যোগ দিতে বলে। কিন্তু নিজ সই দিয়ে ছাড়পত্র গ্রহণ করেও পরবর্তী সময়ে পুলিশ লাইন্সে যোগ দেননি এএসআই সন্তু।
এর আগেও তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি নেজাম উদ্দিন, পটিয়া থানার সাবেক ওসি প্রিটন সরকার, বন্দর থানার সাবেক ওসি জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে।