ওষুধসহ নিত্যপণ্যের বাজারে চালাতে হবে নিয়মিত অভিযান

| শনিবার , ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

আমরা এখন কোন্‌ সমাজে বসবাস করছিতা বুঝতে পারি না। আমাদের ভেতরে ক্রমশ লোপ পাচ্ছে মানবিকতা। আমরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। আমাদের বিবেক লোপ পাচ্ছে। স্বার্থ আর অর্থ এখন প্রাধান্য পাচ্ছে সব জায়গায়। গত ৩১ আগস্ট প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর একটি প্রতিবেদনে আমরা দেখি, ডেঙ্গু সারাতে যে ডিএনএস স্যালাইন খুবই জরুরি, সেটি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে স্যালাইনটির চাহিদা বেড়েছে প্রচুর। কিন্তু সেই স্যালাইনের দেখা পাচ্ছেন না রোগীর স্বজনরা। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়তি মূল্য হাঁকাতে প্রয়োজনীয় এই ওষুধ বিক্রি বন্ধ রেখেছে একটি অসাধু চক্র। ফলে দোকানে কিনতে গেলেই বলছে স্যালাইন শেষ, অন্যত্র দেখুন। এ অবস্থায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা সেবা প্রার্থীর অসহায় স্বজনদের। গত বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনে ডিএনএস স্যালাইনকে ঘিরে কৃত্রিম সংকটের এ চিত্রের দেখা মেলে। জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মচারী রোগী সেজে সেখানকার ওষুধের দোকানে গিয়ে ডিএনএস স্যালাইন চেয়ে পাননি। দোকানে কোনো স্যালাইন নাই বলে তাদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরক্ষণেই অভিযান চালিয়ে দোকানগুলো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিএনএস স্যালাইন বের করে আনেন ম্যাজিস্ট্রেট। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মূল্য বাড়িয়ে বেশি মুনাফা হাতিয়ে নিতে এ অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। এর পেছনে কাজ করছে ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট। এদের কারণে ওষুধের বাজারে দেখা দিয়েছে বিশাল এক নৈরাজ্য। রোগীর স্বজনদের ভোগান্তির খবর নানা মাধ্যমে জেনে ও ডিএনএস স্যালাইনকে কেন্দ্র করে ওষুধের বাজারের অচলাবস্থা নিরসনে গত বুধবার বিকেলে চমেক হাসপাতালের গেটের সামনের ফার্মেসিগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। উপস্থিত ছিলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এসএম সুলতানুল আরেফিন। এসময় কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম তাদের সহযোগিতা করে।

চিন্তা করা যায় এমন অমানবিকতা? যেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ অত্যন্ত ভয়ঙ্করভাবে প্রভাব বিস্তার করছে, আমাদের আতঙ্কিত করে চলেছে, যেখানে প্রতিদিনই মৃত্যু হচ্ছে, সেখানে এমন অমানবিক আচরণ রীতিমত দুঃখজনক। সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, সমাজ এবং দেশ যখন অগ্রগতির স্রোতে ভাসছে, তখন অন্যপ্রান্তে ডুবে যাচ্ছে মানুষের সভ্যতা, শিষ্টাচার আর সৌজন্যবোধ। হারিয়ে যাচ্ছে নৈতিকতা, মানবতা আর মনুষ্যত্ব। সমাজে এখন নেই নিঃস্বার্থ আন্তরিকতা। নেই সম্মান আর স্নেহ। নেই শ্রদ্ধা, ভক্তি আর সৌজন্যবোধ। বলা যায়, শিষ্টাচারিতার স্থানটি প্রায় লোপ পেয়ে যাচ্ছে সমাজ থেকে। মানবিকতার মূলমন্ত্র হল মানুষের কল্যাণ, জাতির কল্যাণ, সমাজের কল্যাণ, সাংস্কৃতিক কল্যাণ। মোট কথা মানুষের ভালো ভাবা, মানুষের জন্য ভালো কিছু করা, মানুষের উন্নতি সাধন করা। সেই জায়গায় আমরা পিছিয়ে পড়ছি। রায়হান আহমেদ তপাদার তাঁর এক লেখায় লিখেছেন, আগের মতো ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’ নীতিবাক্য মেনে চলার প্রবণতা আর নেই। কারণ হিসেবে অপরাধ বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করছেন, নগরায়ণ বাড়ছে। মানুষের কাছে অঢেল অর্থ আসছে। প্রতিযোগিতা বাড়ছে। মানুষ নিজেকে বেশি ভালোবাসছে এছাড়া কারো বিপদে এগিয়ে যাওয়ার পর পুলিশি বা আদালতে গিয়ে হয়রানি হওয়ার উদাহরণও রয়েছে। কিংবা কেউ একটা ভালো কাজ করলে তাকে যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণেও কেউ কারো বিপদে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করছে না। এমনকি অপরাধের পথ খুঁজতে গবেষণা নেই। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে একাডেমিক ব্যক্তিবর্গের কোনো যোগাযোগ নেই। সমাজে হিংস্রতা বেড়েছে। হিংস্রতা মানুষের তখনই বাড়ে যখন মানুষের মধ্যে ইমোশন বা ভ্যালুজ কমতে থাকে। মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখতে পাচ্ছি। আমাদের এখন মায়ামমতা কমে গেছে, আবেগ কমে গেছে। সমাজে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বেড়েছে। মানুষের মধ্যে সামাজিক কোনো শিক্ষা নেই।

সমাজের দিকে তাকালে এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ্য করি। যেন কেউ কাউকে মানছে না। পুলিশ, প্রশাসন, আদালতসবই যেন তুচ্ছ। এ অবস্থায় প্রশাসনের লোকজনকে একটু কঠোর হতে হবে। ওষুধসহ নিত্যপণ্যের বাজারে চালাতে হবে নিয়মিত অভিযান। বাজারকে নজর রাখতে হবে প্রশাসনের। আইন অমান্য করে সাধারণ মানুষের জীবন যাপনে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে