ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের পানি সরবরাহ শুরু জুনে

৯৫ শতাংশ কাজ শেষ, উৎপাদন হবে ৬ কোটি লিটার ৮০ ভাগ পানি যাবে আনোয়ারা বোয়ালখালী কর্ণফুলীর শিল্পাঞ্চলে

শুকলাল দাশ | রবিবার , ১০ মার্চ, ২০২৪ at ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ

দুই দফা সময় পেছানোর পর অবশেষে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ শুরু হচ্ছে আগামী জুনে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। এই প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হবে। প্রকল্পের প্রথম সংযোগ দেওয়া হবে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকো ও পটিয়া পোলের লবণ কারখানাসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলগুলোতে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে জানা গেছে, একটি শিল্প জোনে তারা একটি কানেকশন দেবে। এই কানেকশন থেকে কারখানার কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছেমতো পুরো কারখানায় সংযোগ দিতে পারবে। ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে ছোটবড় মোট ১৩টি বাণিজ্যিক সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম। এই শিল্পাঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট রয়েছে ওয়াসার। অপরদিকে এই প্রকল্পের উৎপাদিত পানির ২ কোটি লিটার দেয়া হবে আবাসিক গ্রাহকদের মাঝে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এক দফা সময় বৃদ্ধির পর গত বছরের (২০২৩ সালে) জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আরো ৬ মাস বৃদ্ধি করে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত গত ডিসেম্বরেও কাজ শেষ করে উৎপাদনে যেতে পারেনি। এখন আরো ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করে আগামী জুনে এই প্রকল্প থেকে পানি উৎপাদন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।

পটিয়াআনোয়ারা ও কর্ণফুলীর শিল্পাঞ্চলে পানি সংকট দূর করার টার্গেট নিয়ে এই প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১০ লাখ মানুষকে সুপেয় পানির আওতায় আনার চিন্তা রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহের জন্য পটিয়া বাইপাস এলাকায় ৫ একর জায়গায় এবং আনোয়ারার দৌলতপুর মৌজায় ২ দশমিক ৯৪ একর জায়গায় দুটি জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। শেষ হয়েছে ১১৩ কিলোমিটার পাইপ লাইনের কাজও।

এই ব্যাপারে ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম আজাদীকে বলেন, আগামী জুনে প্রকল্পের উৎপাদিত পানি সরবরাহ শুরু হবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মোট কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখন শুধুমাত্র প্রকল্পের পাইপলাইনের একটি রিভার ক্রসিং ছাড়া (কালারপোলে সেতুর পাশে) অন্যান্য কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে দৈনিক উৎপাদন হবে ৬ কোটি লিটার পানি। উৎপাদিত পানির মধ্যে তিন উপজেলা আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলীর শিল্পাঞ্চলে ৮০ ভাগ, আবাসিকের জন্য ২০ ভাগ পানি সরবরাহ করা হবে। বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারায় ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহকের মাঝে সংযোগ দেওয়া হবে। তিনি জানান, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ শেষ হয়েছে গত বছর। আমরা বেশ কয়েকবার টেস্টিং করেছি।

প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, প্রকল্পের পানির জন্য প্রথমে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকোসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলগুলো আবেদন করেছিল। আমরা এসব শিল্পাঞ্চলের কাছে সংযোগ নিয়ে গেছি। এখন সংযোগ ফি দিলেই কানেকশন দিয়ে দেব। কিন্তু এখন সিইউএফএল এবং কোরিয়ান ইপিজেড সংযোগ নিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু কাফকো এখন আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা গভীর নলকূল থেকে পানি উত্তোলন করছে। গভীর নলকূল দিয়ে পানি উত্তোলনের কারণে তারা এখন ওয়াসার পানির ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এই ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

জানা গেছে, বোয়ালখালীর ভান্ডালজুড়ি থেকে পানির পাইপলাইন বোয়ালখালী মিলিটারি পুলের কাছে এসে দুই ভাগ হয়েছে। একটি অংশ চলে গেছে আহলা দরবার শরীফ হয়ে পটিয়া পৌরসভায়। অপর অংশটি শিকলবাহা ও মইজ্জ্যারটেক হয়ে কর্ণফুলী ও আনোয়ারায় চলে গেছে। কর্ণফুলী ও আনোয়ারা অংশ যাওয়া পাইপলাইনটি কালারপুল ব্রিজের কাছে এসে ক্রস কালভার্টের কাজ করার জন্য আটকে আছে। বাকি সব পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে।

কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যবর্তী জ্যৈষ্ঠপুরার ভান্ডালজুড়ি পাহাড়ি এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীরে ও দুই পাহাড়ের পাদদেশে ৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম ওয়াসার দৃষ্টিনন্দন ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল প্রকল্পটি। তখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে প্রকল্পের শুরুতে ভূমি জটিলতায় পড়তে হয় ওয়াসাকে। এজন্য তিন বছর আটকা পড়ে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় কাজ। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রথম সংশোধিত আকারে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি করে ১৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা করা হয়। প্রকল্পের ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাংক। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ১১৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে দিচ্ছে ২০ কোটি টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে অংশীদারিত্বে উন্নীত করতে চায় আমিরাত : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বেঈমানি করিনি, আত্মাকে শান্তি দিতে পারব