‘ভোট ডাকাতির নির্বাচনে গদি দখল করা অনির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা একেকজন ডাকাতের সর্দার ছিল’ বলে মন্তব্য করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, তারা (কাউন্সিলর) এখানে উন্নয়ন করেনি। উন্নয়নের পরিবর্তে টাকা চুরি করেছে। ডাকাতি করেছে, মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরে নগরের সল্টগোলা ক্রসিং ধোপপুল তৈয়বিয়া মাদ্রাসার পাশে ৩৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে খাল খনন কর্মসূচি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। উদ্বোধক ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী। নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজী মো. হানিফ সওদাগর এতে সভাপতিত্ব করেন। পরে উদ্বোধন শেষে বিপুল সংখ্যক লোকজন স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে খাল খনন কার্যক্রমে অংশ নেন।
শাহাদাত বলেন, আওয়ামী লীগের সময় থেকে অনিয়ম শুরু হয়েছে। ক্ষমতায় থেকে তারা জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করেনি। এখানে রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন তারা করেনি। খাল খনন কর্মসূচি করেনি। জলাবদ্ধতার মূল সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ ছিল না। খাল খনন কর্মসূচি বাস্তবায়ন না করার ফলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি জনগণের জন্য কাজ করে, আর আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের টাকা লুটপাট করে। এই এলাকায় অনেক উন্নয়ন হতে পারত, কিন্তু আওয়ামী লীগ করেনি।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সবগুলো খাল খনন করে জলপ্রবাহ নিশ্চিত করতে খাল খনন কর্মসূচি কার্যকর ভূমিকা রাখবে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের কারণে এটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে চলে যায়। বর্তমানে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প চলছে। সিডিএর প্রকল্পে আনা হয়েছে মাত্র ৩৬টি। বাকি ২১টি খালের কী হবে? খালগুলো উদ্ধার না হলে জলাবদ্ধতা আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।
ডা. শাহাদাত বলেন, আমাদেরকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচিতে ফিরতে হবে। এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ ছিল। তিনি আধুনিক সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনের জন্য এ কর্মসূচি শুরু করেন। আমরা খালগুলো থেকে পলিথিন অপসারণের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যবস্থাও নিচ্ছি। নালায় ময়লা, প্লাস্টিক, ককশিট ফেলা বন্ধ করতে হবে। আমি নিজে মহেশ খালসহ বিভিন্ন খাল পরিদর্শন করেছি। পলিথিনের স্তর আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার রাখুন।
নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ থাকবে, নালার মধ্যে ময়লা, প্লাস্টিক, পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক বোতল ও ককশিট ফেলবেন না। কারণ এগুলো জলাবদ্ধতার মূল কারণ। বর্তমানে পলিথিনের কারণে খালের উপর চার–পাঁচ ফিট স্তর জমে গেছে, যা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। পলিথিনের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন হতে হবে। এটার বিকল্প হিসেবে নতুন কিছু বাজারজাত করার পরিকল্পনা করছি।
তিনি বলেন, আমি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছি। মশার ওষুধ স্প্রে কার্যক্রম সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করছি। ওয়ার্ড কাউন্সিলর না থাকলেও নেতাকর্মীদের একসঙ্গে কাজ করতে বলছি। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ৪১টি ওয়ার্ডে মাঠ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এরই মধ্যে ছয়টি মাঠের কাজ শুরু হয়েছে। বৈষম্য দূর করতে সমাজের ধনী–গরিব সকলের জন্য খেলাধুলার সুযোগ তৈরি করছি। এভাবেই আমরা বৈষম্যহীন একটি সুন্দর চট্টগ্রাম গড়ে তুলব।
মেয়র পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ডোর টু ডোর প্রকল্পের দায়িত্বশীলদের সাথে বৈঠক করে নিশ্চিত করবেন, তাদের যথেষ্ট জনবল ও ময়লার গাড়ি আছে কিনা। যদি না থাকে তাদের অর্ডার বাতিল করব। জনগণ থেকে পরিচ্ছন্নতার জন্য নির্ধারিত ফি’র বেশি নিলে তাদের চাকরি বাতিল করা হবে। জনগণের সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্ষাকালে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের এলাকাকে পরিষ্কার রাখতে হবে। জনগণ দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন না রাখলে জলাবদ্ধতার সমস্যা কোনোদিনও সমাধান হবে না। জনগণকে সম্পৃক্ত করে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে নগরের খাল ও বড় নালাগুলো পরিষ্কার করার এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন, মো. সেলিম, জাহিদুল হাসান, হাসান মুরাদ, হাজী মো. হোসেন, মো. আজম উদ্দিন, হাজী মো. জাহেদ, মো. কামরুজ্জামান, মো. আলী, মো. হোসেন মনা ও অ্যাডভোকেট মো. হাসান।