অসচ্ছল পরিবারের সন্তান মোহাম্মদ কাউসার (২৬) ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় গিয়েছিলেন উপসাগরীয় দেশ ওমানে। স্বপ্ন ছিল প্রবাসে আয়ের টাকায় সংসারের অভাব ঘুচাবেন। অসুস্থ মা–বাবার জন্য করবেন উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা। আর আদরের তিন বোনের জন্য বিদেশ থেকে পাঠাবেন তাদের শখের জিনিস। কিন্তু গত ৬ অক্টোবর রাতে কাউসারের সেই স্বপ্ন কফিনবন্দি হয়ে ওমান থেকে ফেরত আসে রাউজানের বাড়িতে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর কাউসারের মৃত্যুর খবর পায় তার পরিবার। সেখান থেকে পরিচিত কয়েকজন প্রবাসী জানিয়েছিল গ্যারেজে কর্মরত অবস্থায় গাড়ি চাপায় কাউসার মারা গেছে। হতভাগ্য কাউসার রাউজান সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল আলমের চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র পুত্র সন্তান।
জানা যায়, ওমানে অবস্থানকারী স্বজনদের মাধ্যমে গত ৩০ সেপ্টেম্বর কাউসারের মৃত্যুর খবর পায় তার পরিবার। সেখান থেকে পরিচিত কয়েকজন প্রবাসী পরিবারকে জানিয়েছিল গ্যারেজের কর্মরত অবস্থায় গাড়ি চাপায় কাউসার মারা গেছে। তবে তিনি যে গ্যারেজে কাজ করছিলেন সেই গ্যারেজের কর্তৃপক্ষ বলেছে তার মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে। গ্যারেজ কর্তৃপক্ষের এই দাবি মানতে রাজি নয় স্বজনরা। তাদের অভিযোগ কাউসারের মাথা ও বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গ্যারেজ কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৪ মাস আগে ওমান গিয়েছিলেন কাউসার। গত ৬ অক্টোবর তার কফিনবন্দি লাশ রাউজানের গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছালে এলাকাজুড়ে শোকের মাতম শুরু হয়। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বিমান বন্দর থেকে তার কফিন বাড়িতে আনা হয় অ্যাম্বুলেন্সে। পরে রাত ১২টার দিকে নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে থেকে লাশের জন্য বাড়িতে অপেক্ষায় ছিল কাউসারের স্বজনসহ পাড়া–প্রতিবেশীরা। বাড়ির রাস্তা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশের শব্দ শুনে গোটা এলাকা জুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়। কাউসারের মা পুত্র শোকে বুক চাপড়িয়ে বিলাপ করতে করতে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। আদরের তিন বোন শোকে মুহ্যমান হয়ে যেন কথা বলার শক্তিই হারিয়ে ফেলেছে। বাবা উচ্চ স্বরে চিৎকার করতে করতে অভিযোগ করছিলেন, তার ছেলেটিকে ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলা হয়েছে।