ওমানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আট বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে যাওয়ার সময় গতকাল বিকালে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৭ জনের বাড়ি সন্দ্বীপে। অপরজনের বাড়ি কোথায় তা রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে একটি গণমাধ্যমের খবরে তার বাড়ি মীরসরাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাসস এর খবরে বলা হয়, মাস্কাটে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) আসাদুল হক গতকাল সন্ধ্যায় ফোনে জানান, ‘চালকসহ মোট নয়জন বাংলাদেশি একটি মাইক্রোবাসে করে মাস্কাট থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুকুম সিদরার দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’ তিনি বলেন, সড়কে গাড়িটির সঙ্গে একটি বড় মাছবাহী কন্টেইনার ট্রাকের সংঘর্ষ হয়, এতে আটজন বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হন এবং চালক গুরুতর আহত হন। আহত চালককে চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতদের পরিচয় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দা।
প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য মাস্কাটে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। নিহতদের মরদেহ এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে রাখা হয়েছে। শ্রম কর্মকর্তা বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দূতাবাস মৃতদেহ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আমাদের সন্দ্বীপ প্রতিনিধি জানান, নিহতদের মধ্যে ৫ জন সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের বাসিন্দা। তারা হলেন আলী আকবার সেরাংয়ের ছেলে মোহাম্মদ আমিন সওদাগর, শহীদ উল্লার ছেলে আরজু, মনু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ বাবলু, সিদ্দিক আহমেদের ছেলে সাহাব উদ্দিন, ইব্রাহিম মিস্ত্রির ছেলে মোহাম্মদ রকি। অপর দুজন হলেন মাইটভাংগা ইউনিয়নের জামাল উদ্দিনের ছেলে জুয়েল ও সন্দ্বীপ পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের আবুল হাসেমের ছেলে মোহাম্মদ রনি।
নিহত রকি ১০ মাস আগে ওমানে পাড়ি জমান। ৩ মাস বয়সী ছেলে নুরের চেহেরাটাও সরাসরি দেখা হয়নি হতভাগা এ বাবার। নিহত বাবলুর দুইটি ফুটফুটে সন্তান। একজনের বয়স চার অপরজনের বয়স দুই। অবুজ এ দুইজন সন্তান জানে না তাদের পিতা এ দুনিয়াতে নেই।
সাহাব উদ্দিন ও বাবলুর বাড়ি পাশাপাশি। মাঝখানে ১০ ফুটের রাস্তা। পরিবারের উপার্জনক্ষম সন্তানদের হারিয়ে শোকে কাতর তাদের পরিবার।
মাইটভাংগা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি নিহত জুয়েলের। তার বাড়িতে গেলে সাংবাদিকদের দেখে হাউমাউ করে কেদে উঠেন জুয়েলের পিতা জামাল উদ্দিন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তার সন্তানকে যেন দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়।