মীরসরাই সদরের ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালটি নির্মাণের ৫ বছর পরও চালু হয়নি সকল সুবিধা বা সঠিক ব্যবস্থাপনা। মীরসরাই উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় আড়াই লাখ জনগণের ভরসার কেন্দ্র এই মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির এখন বেহাল দশা। প্রতিদিন দূর–দূরান্ত থেকে অনেক শ্রমজীবী ও প্রান্তিক রোগীরা হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসে। অথচ এখানে নেই কোনো ওষুধ, পরীক্ষাগার থাকলেও নেই পরীক্ষার কোনো সরঞ্জাম। অপারেশন থিয়েটারও আছে তবে তাতেই নেই যন্ত্রপাতি। সরেজমিনে গেলে কথা হয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রসূতি প্রিয়াঙ্কা দাশের (৪৪) সাথে। তিনি বলেন, স্বামী সুজন জলদাশ সমূদ্র থেকে মাছ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় পরিবার বলেই এখানে এসেছি। যেকোনো সময় সন্তান আসতে পারে পৃথিবীতে কিন্তু এখানে নেই কোন ওষুধ। ডাক্তার ছাড়া সবকিছু বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে দরিদ্র স্বামীকে। জ্বরে আক্রান্ত আরেক রোগী নয়দুয়ারীয়া গ্রামের মেহেরুন্নেছা (২৪) বলেন, আমার স্বামী গার্মেন্টস কর্মী, সামর্থ্য নেই বলে এখানে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু সকল প্রকার ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে।
হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট আশরাফুল আলম বলেন, আমি আছি তবে কোনো সরঞ্জাম নেই। তবুও দায়িত্বরত ডাক্তার তার নিজের পকেট থেকে ব্লাড গ্রুপিংয়ের সরঞ্জাম কিনে দিয়েছেন। তাই রোগীদের প্রয়োজন পড়লে এটুকু করে দেই।
হাসপাতালের দায়িত্বরত গাইনী চিকিৎসক ডা. নাসরিন সুলতানা জুলি বলেন, বর্তমানে এখানে প্রতি মাসে ৭০–৮০ জন শিশু জন্ম নিচ্ছে। গত আগস্ট মাসে ৬১ জন, জুলাইয়ে ৭৮ জন মা এখানে সুস্থ সুন্দরভাবে কোনপ্রকার সিজারিয়ান ছাড়া সন্তান জন্ম দিয়েছেন। তবে এনেসথেসিয়াসহ ওটি এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং ওষুধ থাকলে রোগীদের আরো বেশি সেবা দেয়া সহজ হতো। তিনি বলেন, এখানে ২ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও আমি একাই সেবা দিচ্ছি। আবার পরিদর্শিকার ৪টি পদ থাকলেও এখানে আছে ২ জন। তার মধ্যেও একজন বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছে এতে স্বাস্থ্য সেবা কিছুটা ব্যাহত হলেও আমরা চালিয়ে নিচ্ছি।
উপজেলা সদরের মতো প্রাণকেন্দ্রে একটি সরকারি হাসপাতালের এমন অবস্থার পরিবর্তন হবে কিনা জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হাসান বলেন, এই হাসপাতালটি উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাতৃ সেবা কেন্দ্র হলেও দায় স্বীকার করছি যে, গত এক বছর ধরে আমরা রোগীদের কোন প্রকার ওষুধও দিতে পারছি না। কোন পরীক্ষা–নিরীক্ষা দিতে পারছি না। তবে আমরা জেলায় মিটিং হলেই ওষুধ, সরঞ্জাম ও সেবাপ্রদানের অন্যান্য জনবলসহ সকল বিষয় উপস্থাপন করলেও ন্যাশনাল টেকনিক্যাল কমিটি থেকে গত ১ বছর ধরে কোন বরাদ্ধ আসছে না বলে আমরা জেনেছি। তিনি বলেন, আমরা জেলা পর্যায়ে আরো জোর চেষ্টা করছি সকল সংকট নিরসনের।












