ওকালতনামা না নিয়েই আদালতে চিন্ময়ের পক্ষে ঢাকার আইনজীবী

৩ আবেদনই নাকচ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিন শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এর আগে চিন্ময়ের পক্ষে ঢাকা থেকে এসে বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ জামিন শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনাসহ আদালতের কাছে পৃথক তিনটি আবেদন দাখিল করেন। বাকী দুটি হলআগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি রাখা ফৌজদারি মিস মামলার (জামিন চেয়ে করা মিস মামলা) নথি উপস্থাপন করা এবং অপরটি হচ্ছেচিন্ময়ের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে শুনানি করার আবেদন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূইয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, চিন্ময় দাসের জামিন শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনার আবেদনটি তোলা হলে আমরা এর বিরোধীতা করি। উক্ত আইনজীবীর ওকালতনামা ছিল না। তিনি উক্ত ফৌজদারি মিস মামলাটির ফাইলিং আইনজীবী নন এবং ফাইলিং আইনজীবী সশরীরে আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। এ জন্য আদালত তার দরখাস্তটি নট মেইন্টেইনেবল বলে নাকচ করে দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, চিন্ময় দাশের জামিন শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনার আবেদনটি যেহেতু নাকচ করা হয়েছে সেহেতু বাকি ২টি আবেদনের আদেশ প্রদানের আর আবশ্যকতা ছিল না। ঢাকা থেকে আসা চিন্ময়ের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ আদালত প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের বলেন, চিন্ময় দাশকে এখানকার আইনজীবীরা কেউ রিপ্রেজেন্ট করতে পারছেন না। জজ সাহেব আমার আবেদন অ্যালাও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় অসংখ্য আইনজীবী একসাথে চিৎকার করতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, উনি পারবেন না, উনি এখানে কেন আসছেন, উনার ওকালতানামা নেই। তিনি বলেন, চিন্ময় দাশের পক্ষে যে আইনজীবীরা ছিলেন তারা মামলার আসামি। তারা কিভাবে এখানে আসবেন? এখানে যেহেতু আবেদনের উপর শুনানি হয়নি, আমরা উচ্চ আদালতে যাব।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঢাকা থেকে একজন আইনজীবী আদালতে তিনটি আবেদন দাখিল করেছেন। কিন্তু আসামি পক্ষে ওকালতনামা বা আসামির উকিলের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অনুমতি না থাকায় আদালত ওই আইনজীবীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আদালতসূত্র জানায়, মেট্রো আদালতে চিন্ময় দাশের জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর তার আইনজীবীরা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে একটি মিস মামলা দায়ের করেন। সেটির উপর ৩ ডিসেম্বর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন ওই বিষয়ে শুনানি না করে আগামী ২ জানুয়ারি নতুন দিন ধার্য করেন।

নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ আগস্ট ঢাকা থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তথা ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয়। তার পক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন চেয়ে সেদিন একটি আবেদন করেন। শুনানি শেষে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম জামিন নামঞ্জুর করে চিন্ময়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশ যখন চিন্ময়কে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাবে তখন আগে থেকে জড়ো হওয়া তার অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানের গতিরোধ করেন এবং প্রিজন ভ্যানের সামনে পিছে শুয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা পর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানকে কারাগারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত পাড়ায় ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর করে। শুরু হয় সংঘাত। এক পর্যায়ে আদালতের প্রবেশ গেটের অদূরে খুন হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতটি মামলা দায়ের হয়েছে। এরমধ্যে কোতোয়ালী থানায় ৬টি ও আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়।

পুলিশ জানায়, কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ৭৯ জনের নামে তিনটি, আলিফের বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নামে একটি (হত্যা মামলা) ও তার ভাই বাদী হয়ে ১১৬ জনের নামে একটি ও মোহাম্মদ উল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ী ২৯ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া সর্বশেষ মো. এনামুল হক নামের একজন বাদী হয়ে ১৬৪ জনের নামে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত সেটি কোতোয়ালী থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমদানি কন্টেনার অফডকে স্থানান্তর করে ডেলিভারি প্রদানের অনুরোধ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের নতুন পুলিশ সুপার আবু সায়েম প্রধান